• করিডরে বাধা, পথ হারিয়ে ক্ষিপ্ত হচ্ছে হাতি
    বর্তমান | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: একদিকে সঙ্কোশ, অন্য দিকে তিস্তা হয়ে মেচি। মাঝে দফায় দফায় বনাঞ্চল ও জনবসতি। অসম, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে জঙ্গল ঘেরা সীমান্ত। এরই মধ্যে করিডর। বনদপ্তরের হিসাব অনুসারে এখানে হাতির ১৪টি করিডর রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই করিডরগুলির মধ্যে দিয়ে আবার হাতির চলাচলের রুট রয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, তার সংখ্যাও প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। চা বাগান, আর্মি ক্যাম্প, গ্রাম, চা বাগানের শ্রমিক, সাধারণ মানুষের বসবাস সবই রয়েছে এর মধ্যে। অনেক গবেষণায় এই করিডরগুলিকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন সঙ্কোশ-তোর্সা, তোর্সা-তিস্তা, তিস্তা-মেচি।


    অরণ্যবেষ্টিত এই সব জায়গায় রয়েছে প্রচুর চা বাগান। জঙ্গল ঘেরা এই অঞ্চলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক শোভার মধ্যে লুকিয়ে আছে চা বাগানের শ্রমিক লাইন, গ্রাম।


    নিকষ অন্ধকার। শ্রমিক লাইনের আলো প্রায় নিভে গিয়েছে। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর শ্রমিকেরা সবে  ঘুমিয়েছেন। ঠিক সেই সময় পাতা ভাঙতে ভাঙতে মড়মড় শব্দ করে অথবা প্রায় নিঃশব্দে চলে আসে হাতির দল। এক্ষেত্রে তাদের খাবারের খোঁজই মুখ্য। শ্রমিক লাইনের ধারে থাকা জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, অন্যান্য সব্জি যেমন রয়েছে, ঘরে থাকা চাল, ডাল, গম, আটা কোনও কিছুই হাতির খাদ্য তালিকা থেকে বাদ যায় না। মিড ডে মিলের মজুত চাল, রেশন দোকানের সামগ্রী খেয়ে ফেলা এমনকী আর্মি ক্যাম্পের রেশন হাতির খেয়ে ফেলার উদাহরণ ভুরি ভুরি পাওয়া যায়। হাতির হাঁড়িয়া খাওয়ার গল্প তো ডুয়ার্সের বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায়। কিন্তু দূর থেকে এসব শুনতে যতটা মজাদার মনে হয়, বাস্তবে মোটেও তেমনটা নয়! হাতির করিডর, রুটে যাতায়াতের পথে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ, বনদপ্তরের কর্মী, আধিকারিকদের মধ্যে যাঁরা এই সমস্ত পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন, তাঁরা জানেন কুনকি হাতির পিঠে চড়ে অরণ্য ভ্রমণ আর এলাকায় ঢুকে পড়া দামাল দাঁতালকে ঘরে ফেরানো এক নয়।


    অরণ্যচারী হাতি আপাত শান্ত, ধীর, স্থির। যুগ যুগ ধরে পূজনীয়। কিন্তু সেই হাতিই গত কয়েক দশক ধরে ক্রমাগত জঙ্গল থেকে এদিক ওদিকে বেরিয়ে আসছে! আসলে মানুষের বসতি বেড়ে চলায় জঙ্গল কমে রাস্তার সংখ্যাও বাড়ছে দিনদিন। আর ক্রমাগত বাড়ছে হাতি-মানুষের সংঘাত!


    ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের পানা নদী সংলগ্ন রাঙামাটি, রাধারানি, চুয়াপাড়া, মেচপাড়া প্রভৃতি চা বাগানগুলির বাসিন্দারা গত ৫০ বছরের বেশি সময় হাতির আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছেন। একই সমস্যা মাল, মেটেলি, ক্রান্তি, গোরুমারা সংলগ্ন বহু এলাকায়। শ্রমিক লাইন, স্টাফ কোয়ার্টারে হাতির হানা যেন গা সওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন জায়গা ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় অসংখ্য। 


    ড়ুয়ার্সের রাজাভাতখাওয়ার বাসিন্দা লোকসংস্কৃতি জগতের রামকুমার লামার কথায়, ছোটবেলা থেকেই দেখছি হাতির দল আসছে। আগে মশাল জ্বালালেই চলে যেত। কিন্তু এখন বনদপ্তর ফায়ার করলেও হাতি নড়তে চায় না। মানুষকে আক্রমণ, ফসল নষ্ট আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। - ফাইল চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)