সংবাদদাতা, ইটাহার: শিক্ষকতার চাকরি করে দেওয়ার নামে ১০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। বংশীহারীতে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে। পাওনাদারদের চাপে উধাও শিক্ষিকার স্বামীও।
ধৃত শিক্ষিকার নাম আক্তারি খাতুন। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর থানার জুগিবাড়ি গ্রামে। আক্তারি গোকর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি প্রথমে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। পরে প্রাথমিকে চাকরি পান। পুলিস সূত্রে খবর, শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী দুই দিনাজপুর সহ অন্যান্য জেলার বহু যুবক, যুবতীকে সরকারি চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন।
শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ইটাহার থানায় প্রথম অভিযোগ করেছিলেন বাঙ্গারদিঘি এলাকার মহিদুর রহমান। ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মহিদুরের ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শিক্ষিকা। তাঁর ফাঁদে পা দিয়ে বেকার ছেলের চাকরির জন্য ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে নগদ ১০ লক্ষ টাকা দেন মহিদুর। আক্তারি কথা দিয়েছিলেন চাকরি না হলে সমস্ত টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও চাকরি হয়নি জাহাঙ্গীরের। মহিদুর টাকা ফেরৎ চাইলে টালবাহানা করতে থাকেন শিক্ষিকা। কয়েক মাস আগে গোকর্ণ গ্রামে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টদের উপস্থিতিতে সালিশি সভা হয়। সেখানে শিক্ষিকা টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং ফেরৎ দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা মহিদুরকে ফিরিয়ে দিলেও বাকি ৯ লক্ষ ৫০ হাজার দেননি শিক্ষিকা। তারপর থেকে গা ঢাকা দেন শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী মিসবাউল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আলম বলেন, শুনেছি আর্থিক প্রতারণার দায়ে শিক্ষিকা গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রায় দেড় মাস তিনি স্কুলে আসেননি। তাঁর স্বামীও চারমাস গ্রাম থেকে উধাও।
গোকর্ণ গ্রামের বাসিন্দাদের সূত্রে খবর, কয়েক বছর শিক্ষিকার পরিবারের সম্পত্তি বাড়তে দেখে সন্দেহ হয়েছিল গ্রামবাসীদের। অভিযোগকারী মহিদুর বলেন, বেকার ছেলের গতি হবে ভেবে শিক্ষিকার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছিলাম। ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে ভুল বুঝতে পেরেছি। তবে শুধু শিক্ষকতার নয়, গ্রুপ ‘ডি’ পদে চাকরির জন্যও লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী।
গোকর্ণ গ্রামের যুবক জাহানদার হুসেনও শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, প্রায় সাত বছর আগে গ্রুপ ‘ডি’ পদে চাকরির জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। এখনও টাকা ফেরৎ দেননি শিক্ষিকা। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে শিক্ষিকার বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিস। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি। তবে গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে ইটাহারের পুলিস বংশীহারির পাঞ্জারিপাড়ার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রবিবার গ্রেপ্তার করে শিক্ষিকাকে। সোমবার ধৃতকে রায়গঞ্জ জেলা আদালতে পেশ করলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। - নিজস্ব চিত্র।