• সিপিএমের জেলা কমিটি থেকে বাদ দাপুটে সুশান্ত
    এই সময় | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, খড়্গপুর: জেলা কমিটি থেকেই বাদ পড়লেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের প্রাক্তন সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীও বটে। জেলা সিপিএমের ২৫ তম সম্মেলনে ৭১ জনের জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে সোমবার। তার মধ্যে তিনজন আমন্ত্রিত। সেই তালিকায় নেই এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা সুশান্তের নাম।

    এর আগে তিনি ছিলেন জেলা সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সহবাসের অভিযোগ তোলেন এক মহিলা। তখন সুশান্তকে সরিয়ে অস্থায়ী ভাবে জেলার সম্পাদক করা হয়েছিল বিজয় পালকে। সোমবার সেই বিজয়কেই স্থায়ী সম্পাদক করা হলো।

    উল্লেখ্য, এক সময়ের সুশান্তর গড় বলে মনে করা হতো গড়বেতাকে। তিনি ছিলেন দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের ঘনিষ্ঠ। আবার সুশান্তর ঘনিষ্ঠ ছিলেন তপন ঘোষ ও সুকুর আলি। অভিযোগ, এঁদের দাপটে একসময়ে বিরোধীরা স্থানীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীও দিতে পারতেন না।

    কাকতালীয় ভাবে দু’দিনের জেলা সম্মেলনে সেই গড়বেতার বর্তমান সিপিএম নেতারা সবচেয়ে বেশি সুশান্তর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তা ছাড়াও নারায়ণগড়ের মকরামপুর, ডেবরার রাধামোহনপুর, গোয়ালতোড়, দাঁতন, কেশপুর, দাসপুর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা জেলা সম্মেলনে কড়া সমালোচনা করেন প্রাক্তন এই মন্ত্রীর। মনে করা হচ্ছে, এই চাপেই শেষপর্যন্ত জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়লেন তিনি।

    জেলা সম্মেলনে যোগ দিলে সুশান্তকে যে কোপের মুখে পড়তে হবে, তার আঁচ আগে থেকেই মিলেছিল। রবিবার সম্মেলন চলাকালীন প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫১টি এরিয়া কমিটির মধ্যে ২১টি এরিয়া কমিটির নেতারাই সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন এই প্রাক্তন জেলা সম্পাদকের। তার জেরে রবিবার সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে যান প্রাক্তন মন্ত্রী। যদিও সোমবার সম্মেলন শুরুর কিছু পরে ফের তিনি হাজির হন।

    শুধু সুশান্ত নন, কে জেলা সম্পাদক হবেন তা নিয়েও মতবিরোধ তৈরি হয় সম্মেলনে। রাজ্য কমিটির নির্দেশ ছিল, ভোটাভুটি আটকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে পার্টির সম্পাদক নির্বাচন করতে হবে। তবু বারবার ভোটাভুটির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল সম্মেলন। যা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করতে হয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। দল ক্ষমতায় না–থাকলেও জেলা সম্পাদক পদটি হাতছাড়া করতে নারাজ কোনও পক্ষই। তাই সম্মেলনে গোলমাল সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম থেকে শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের মতো রাজ্য নেতাদের।

    জেলা কমিটি গঠনের পরে সম্পাদক হিসেবে বিজয় পাল পাল ছাড়াও মেঘনাদ ভুঁইয়া এবং গোপাল প্রামানিকের নাম উঠে আসে। অবশেষে শীর্ষ নেতৃত্ব সেই তিনজনকে আলাদা করে একটি ঘরে বসিয়ে বোঝা‌নো শুরু করেন। গোপাল প্রথমেই লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তারপর সরে দাঁড়ান মেঘনাদও।

    বর্তমান অবস্থায় গত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে সিপিএমকে ‘শূন্য’ বলে কটাক্ষ করে চলেছেন অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় সম্মেলনে জেলা সম্পাদক নির্বাচনে ভোটাভুটি হলে যে জনমানসে বিরূপ বার্তা যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

  • Link to this news (এই সময়)