নবম শ্রেণির প্রথম ক্লাস শুরু হওয়ার আগে স্কুল গ্রাউন্ডে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রেয়ার করছিল পড়ুয়ারা। হঠাৎই জানলার কাচ, ফ্রেমও পড়ে রক্তাক্ত হয় তিন জন। সোমবার, ১৩ জানুয়ারি সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে নব নালন্দা স্কুলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর একের পর এক অভিযোগ সামনে এসেছে (গুরুতর আহত প্রিয়ম দাস আরজি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ভর্তি)। এ বার বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সৃঞ্জয় রায় নামে নবম শ্রেণির পড়ুয়ার মা বর্ণালী রায়। তাঁর অভিযোগ, শুধু অ্য়াম্বুল্য়ান্স দেরি করে পৌঁছনোই নয়, গোটা ঘটনায় অত্য়ন্ত অমানবিক আচরণ দেখিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার কথা তো অভিভাবকদের জানানোই হয়নি, পরিবর্তে হাত কেটে রক্ত বের হতে দেখলেও তাঁর সন্তানকে প্রেয়ার থেকে ক্লাসে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল সোমবার—অভিযোগ বর্ণালীর। তিনি নিজে পরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যান। টিটেনাস দেওয়া হয় সৃঞ্জয়কে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেনি। মাথায় চোট লাগায় এ দিনও খানিক তন্দ্রাছন্ন সে। স্কুলের গাফিলতি নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। ‘এই সময় অনলাইন’-এর তরফে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বর্ণালী বলেন, ‘এরপর কী ভাবে ছেলেকে ওই স্কুলে আবার পাঠাব, সেটাই এখন ভাবছি।’ নবম শ্রেণিতে ভর্তির পর প্রথম দিন এমন অভিজ্ঞতা হবে ভাবতে পারেননি তাঁরা।
বর্ণালী বলেন, ‘স্কুলের তরফে আমাকে কিছুই জানানো হয়য়নি। একজন অভিভাবক আমাকে ফোন না করলে জানতেই পারতাম না যে, এ রকম ঘটনা ঘটেছে। হাত দিয়ে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে দেখেও ছেলেকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়েছিল ওরা। আমি দৌড়ে স্কুলে গিয়েছি। পরে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে টিটেনাস দেওয়া হয়। নবম শ্রেণিতে ওঠার প্রথম দিনে এমন হবে, এখনও ভাবতেই পারছি না!’ বর্ণালী জানান, থানায় যাওয়ার কথা বললে তার পর নড়েচড়ে বসে স্কুল। এ দিকে, বহু চেষ্টা করেও প্রিয়ম দাসের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জানা গিয়েছে তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
সৃ্ঞ্জয়ের বাঁ হাত কাচে কেটে গিয়েছিল। মাথায়ও চোট পেয়েছে সে। অভিভাবকদের দাবি, বহুদিন ধরেই এই স্কুলে নানা অব্যবস্থা রয়েছে। যা নিয়ে বার বার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি। তাঁদের অভিযোগ, দেখা করেননি প্রিন্সিপাল, নিয়মিত হয় না পেরেন্টস-টিচার মিটিংও। কোনও কারণে ওই মিটিংয়ে হাজিরা দিতে না পারলে ছাড়া স্কুলে ঢুকতেও দেওয়া হয় না। বর্ণালী বলছিলেন, ‘প্রতি মাসে ৪,৬০০ টাকা নেওয়া হয়। তার মধ্যে অ্যাম্বুল্য়ান্সের জন্য নেওয়া টাকাও রয়েছে। যে ছেলেটি গুরুতর জখম হয়েছে, তার ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায়নি।’
ঘটনার দিন দীর্ঘক্ষণ স্কুলের প্রিন্সিপালকে দেখতে না পেয়ে অভিভাবকদের ক্ষোভ আরও বাড়ে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে যখন স্কুল চত্বর তোলপাড়, তার বেশ কিছুক্ষণ বাদে স্কুলের প্রিন্সিপাল অরিজিৎ মিত্র স্কুলে আসেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘জানলা খোলার সময়ে যদি কাচ ভেঙে পড়ে, তার মানে কি রক্ষণাবেক্ষণ নেই? অবশ্যই এটা দুর্ঘটনা। এটা হওয়া উচিত নয়।’ প্রিন্সিপালের এই কথায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে।