আজকাল ওয়েবডেস্ক: পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগগার পাশাপাশি হাল ফ্যাশানের ঘুড়ি উড়ছে আকাশে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে নয়। রাজ আমলের প্রথা মেনে মঙ্গলবার পৌষ সংক্রান্তির দিন বর্ধমানে শুরু ঘুড়ির মেলা। চলবে শহরজুড়ে। তিনদিন ধরে কাঠগোলা ঘাট, সদরঘাট আর বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায় বসবে বড় মেলা। সবচেয়ে বড় মেলা হবে বুধবার, সদরঘাটের দামোদর তীরে।
শোনা যায়, মহারাজার আমলে রাজবাড়িতে ঘুড়ি তৈরি করা হত। এরপর থেকে পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ির মেলা হয়ে আসছে বর্ধমানে। ঐতিহাসিকদের মতে, বর্ধমান মহারাজা মহাতাবচাঁদের আমলে দেশ-বিদেশ থেকে নানা রঙের, নানা আকারের ঘুড়ি আনাতেন মহাতাবচাঁদ।রাজবাড়িতে ঘুড়ি তৈরি করে আকাশে ওড়াতেন রাজপুরুষরা। রাজকীয় ঘুড়ির ছড়াছড়ি হত আকাশে। তবে এবছরের আকাশ অনেকটাই ফাঁকা। সেই ভিড় বলতে গেলে নেই। ঘুড়ি ওড়াবার চেয়ে মাইক বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশের ইচ্ছাটাই বেশি চোখে পড়েছে। তারই মধ্যে নতুন প্রজন্মের অনীক হাজরা জানায়, এটা হেরিটেজ। তাই ঘুড়ি ওড়াচ্ছি। নইলে ঘুড়ির দাম অনেক বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুড়ি কমে আসছে। ঘুড়ি বিক্রেতা তোতন জানান, ঘুড়ির আকর্ষণ এখন কম। মানুষের হাতে পয়সাও কম। আগের পুরনো ডিজাইনের চেয়ে নয়া জমানার পছন্দের ঘুড়ি চাইছেন ক্রেতারা।
মঙ্গলবার ইদিলপুরে কাঠগোলা ঘাটে মেলাও জমে উঠেছে। সেখানেও মেলার মজাই আসল। ঘুড়ি কিন্তু সেখানেও কমেছে। প্রতিবছর এসময় দেখা যেত ঘুড়ি, লাটাই হাতে ছাদে ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত যুবক থেকে বড়রা। পিছিয়ে থাকতেন না মহিলারাও। সঙ্গে মজা বাড়াতে রান্নাবান্না ও খাওয়া দাওয়া হত। এবারেও সেটা আছে। কিন্তু অনেক কম। তবু মাঝে মধ্যে ভোকাট্টা আওয়াজটা ভেসে আসছে। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ির মেলা হলেও রাজ আমল থেকেই পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোর চল রয়েছে বর্ধমানে। রাজপ্রথা মেনে দোল বা হোলির মত বর্ধমানে আলাদা সময় হয় ঘুড়ির মেলা।
ঘুড়ির মেলার জন্য প্রায় একমাস আগে থেকে শুরু হয় নানা প্রস্তুতি। নানা উপকরণ দিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া হয়। এখন অবশ্য বাজারে সহজেই মেলে মাঞ্জা দেওয়া সুতো। কিন্তু চিনা মাঞ্জায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটলেও অনেকেই সেই বিষয়টি মাথায় রাখেন না। প্রশ্ন একটাই। বদলে যাওয়া সময়ে এই আলাদা ঘুড়ির মেলাকে আর কতদিন আগলে রাখতে পারবে বর্ধমান?