হলদিয়ায় বাঙালির ঐতিহ্য পিঠেপুলিকে বাঁচিয়ে রাখার বার্তা, শুরু ‘পৌষ পরব’
বর্তমান | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, হলদিয়া: পিঠেপুলির পরম্পরাগত ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার বার্তা দিয়ে হলদিয়ায় শুরু হয়েছে দু’ দিনের ‘পৌষ পরব’। মঙ্গলবার মকর সংক্রান্তির দিনে হলদিয়া টাউনশিপের মাখনবাবুর বাজারে পুরসভার মোহনা মার্কেট কমপ্লেক্স চত্বরে এই উৎসবের সূচনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আয়োজক হলদিয়ার রামকৃষ্ণ সারদা মিশন আশ্রম এবং সাংবাদিক বন্ধুরা। এদিন পিঠেপুলি উৎসবে চিতই পিঠে, ভাপা কদমপুলি, মুগের ভাজা পিঠে, গোকুল পিঠে, পাটিসাপটা বাঙালির হারিয়ে যেতে বসা স্বাদ ও স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে। পিঠেপুলির সঙ্গে সঙ্গত দিচ্ছে টুসু, ভাদু, ঝুমুরের মতো বাংলার লোকজ নাচ ও গান। দু’ দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ছিল স্কুল পড়ুয়াদের পিঠে ও পুলি তৈরির প্রতিযোগিতা। আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনে রয়েছে গৃহিনীদের পিঠেপুলি প্রতিযোগিতা। প্রথম দিনেই ভিড় উপচে পড়ে পৌষ পরবের প্রাঙ্গণে। মঙ্গলবার পেট্রকেম লেডিজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উৎসবের সূচনা করেন। ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ফুড সেফটি অফিসার বিশ্বজিৎ মান্না, মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী বিবেকাত্মানন্দজি মহারাজ, সাংবাদিক চঞ্চল প্রধান, আরিফ ইকবাল খান, নরেশ দাস, সত্যেন্দ্রনাথ নায়ক প্রমুখ।
বিকেল থেকেই স্কুল পড়ুয়াদের পিঠেপুলি তৈরির প্রতিযোগিতা জমে ওঠে। হলদিয়া শহর ও লাগোয়া গ্রামীণ এলাকার দশটি স্কুলের ছাত্রীরা মনোহারি পিঠে সাজিয়ে চমকে দিয়েছে দর্শকদের। বাজিতপুর সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের শিল্পী ভৌমিক, গীতশ্রী নস্করদের পিঠেপুলি সাজানোর পরিবেশনা ছিল অসাধারণ। গ্রামীণ বাড়ির উঠোনের পরিবেশ সৃষ্টি করে সেখানে পিঠেপুলি তৈরি চমকে দিয়েছে সবাইকে। তাদের স্কুলের বার্তা ছিল, পিঠেপুলি পায়েসের পৌষপার্বণ, স্বাদ আর সাধ্যের মেলবন্ধন। এদিন সমস্ত পড়ুয়া স্বাস্থ্যবিধি প্রতিযোগিতার পর দর্শনার্থীদের পিঠে ও পায়েস খাওয়ায়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে রামগোপালচক ভারতী বিদ্যামন্দির, দ্বিতীয় বাজিতপুর সারদামণি বালিকা বিদ্যালয় এবং তৃতীয় রঘুনাথপুর জুনিয়র হাইস্কুল। এদের সবাইকে রুপোর স্মারক দেওয়া হয়েছে। বাকি সমস্ত স্কুলকে রুপোর স্মারক বিবেকানন্দ উপহার দেওয়া হয়েছে আয়োজকদের তরফে। সন্ধেয় সবার হাতে পুরস্কার তুলে দেন হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিস সুপার মনোরঞ্জন ঘোষ। আয়োজকদের তরফে বিবেকাত্মানন্দজি মহারাজ বলেন, ফাস্ট ফুডের জন্য বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পিঠেপুলি হারিয়ে যাচ্ছে। পৌষের সময় কয়েকদিন ছাড়া পিঠেপুলি পাওয়াই যায় না। কিন্তু টিফিন হিসেবে পিঠের কদর রয়েছে। নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে ভিন রাজ্য ও ভিন দেশের খাবারে অভ্যস্ত হচ্ছি। পিঠে গ্রাম ও শহরের মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার জন্য দারুণ খাদ্যবস্তু। এর ওপর জোর দিতে পিঠে তৈরি প্রশিক্ষণ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হবে মিশনের তরফে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, গৃহিনীদের পাঁচ রকমের সাতটি করে পিঠে নিয়ে প্রতিযোগিতায় হাজির হতে হবে। মাটির বা কাঁসার থালায় সাজাতে হবে। মেলায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি পিঠে বিক্রিও করতে পারবেন মহিলারা। শহরবাসীর জন্য বসেছে পিঠের দোকানও। মঙ্গলবার সেখানে সন্ধের আগেই পিঠে শেষ হয়ে যায়। লাইন দিয়ে পিঠে কিনতে দেখা যায় বহুজনকে। অনেকে পিঠে না পেয়ে ফিরেও গিয়েছেন। এদিন সন্ধেয় মেলায় গানের আসর জমিয়ে দেন শালবনীর ঝুমুরের দল। সন্ধের আসর মাতায় মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের টুসু ও ভাদু গান। বুধবার গাইবেন বৈশাখী রায় ও রয়েছে পাইক নাচ।-নিজস্ব চিত্র