বাবলার পর ফের শ্যুটআউট মালদহে, গুলির পর প্রকাশ্যে থেঁতলে খুন তৃণমূল কর্মী
বর্তমান | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: ইংলিশবাজারের পর এবার কালিয়াচক। বাবলা সরকার খুনের ঠিক ১২ দিনের মাথায় আবারও দিনেদুপুরে শ্যুটআউট মালদহে! এবারও টার্গেট ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা। প্রথমে এলোপাথাড়ি গুলি চলে। তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হতেই তৃণমূল নেতা ও তাঁর অনুগামীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুষ্কৃতীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তৃণমূল কর্মী আতাউর হক। গুরুতর জখম হয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ ও তাঁর ভাই প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান এসারুদ্দিন শেখ ওরফে রাজু। মঙ্গলবার হাড়হিম করা এই খুনের পরই সক্রিয় হয়েছে পুলিস। ১০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিস সুপার প্রদীপকুমার যাদব।
গোটা ঘটনায় দলের গোষ্ঠীকোন্দলকেই দায়ী করেছেন সুজাপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল গনি। তাঁর দাবি, এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলের জেরেই এই খুন। তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার তৃণমূল নেতা জাকির শেখের লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শুনেছি। জাকিরের নেতৃত্বে একদল লোক কিছুদিন আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিল। সেবিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’ যদিও জাকিরের যোগদানের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি। ঘটনার নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘বিধানসভা ভোট আসছে। বিরোধীরা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। জাকির কংগ্রেস করে। তাঁর তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি আমার অন্তত জানা নেই।’
পুলিস সূত্রে খবর, এদিন সকাল ন’টা নাগাদ কালিয়াচক-১ ব্লকের নওদা যদুপুর অঞ্চলে একটি নর্দমার কাজের সূচনা অনুষ্ঠান ছিল। ভাই রাজু ও অনুগামীদের নিয়ে সেখানে যোগ দেন তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেই সময় আচমকাই বাইক নিয়ে হাজির হয় কয়েকজন দুষ্কৃতী। আর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বকুল ও তাঁর দলবলকে ঘিরে অতর্কিতে হামলা চালায়। চলে এলোপাথাড়ি গুলি। তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হতেই বকুল, রাজু ও আতাউরকে ঘিরে ধরে মারতে থাকে দুষ্কৃতীরা। ইট দিয়ে তিনজনের মাথায় আঘাত করা হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন প্রত্যেকে। তাতেও দুষ্কৃতীরা থামেনি। আতাউরের মাথায় ইট দিয়ে বারবার আঘাত করতে থাকে তারা, যেন তাঁর উপরই আক্রোশ বেশি ছিল। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে মালদহ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিত্সক আতাউরকে মৃত ঘোষণা করেন। গোটা ঘটনায় জাকিরের লোকদের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন বকুলের আর এক ভাই মহম্মদ আজমল। তাঁর কথায়, ‘জাকির দেড় মাস আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। ওর লোকেরাই দাদার উপর হামলা চালিয়েছে। কারণ দাদাকে সরাতে পারলে চেয়ারটা ও দখল করবে।’
জাকির এবং বকুল বাম আমল থেকেই দাপুটে কংগ্রেস নেতা হিসেবে পরিচিত। দু’জনের বিরুদ্ধেই প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বকুল তৃণমূলে যোগ দেয়। তবে জাকিরের বিষয়টি নিয়ে বিধায়ক গনির মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘জেলা সভাপতির বক্তব্যই দলের অবস্থান।’