শান্তিতে মৃত্যু কীভাবে, অনলাইনে সার্চ করতেন আইআইটির কৃতী ছাত্র
বর্তমান | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কীভাবে শান্তিতে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব! মৃত্যুর পর স্বর্গলোকে আদৌ কি পৌঁছনো যায়? আত্মহত্যা কি শান্তিপূর্ণ মৃত্যুর পথ হতে পারে? ইদানীং এই সব বিষয় নিয়ে আগ্রহ বেড়েছিল খড়্গপুর আইআইটির আত্মঘাতী ছাত্র শাওন মালিকের (২২)। অনলাইনে সার্চ করে এইসব বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন পড়তেন ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ওই কৃতী ছাত্র। এমনকী এই সব বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রীতিমতো তর্কবিতর্ক চালাতেন তিনি। এইসব থেকেই শাওনের মনে হয়েছিল, আত্মহত্যার পথেই শান্তিপূর্ণ মৃত্যু সম্ভব। কৃতী ছাত্রের মোবাইল ও ল্যাপটপ ঘেঁটে এই সংক্রান্ত বিষয়ের সার্চ হিস্ট্রি পেয়েছেন পশ্চিমে মেদিনীপুর জেলা পুলিসের অফিসাররা। সেখান থেকেই তদন্তকারীদের ধারণা, এখান থেকেই শাওনের মনে আত্মহত্যার বিষয়টি ঘুরপাক খেতে শুরু করে। তারপরই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। ডিজিটাল নমুনা তদন্তকারীরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই ছাত্র খুন হননি, আত্মহত্যাই করেছেন।
আইআইটির মেধাবী ছাত্র কেন এই চরম সিদ্ধান্ত নিলেন, তার তদন্তে নেমে অফিসাররা জানতে পারছেন, প্রথম থেকেই আইআইটিতে ভালো রেজাল্ট করছিলেন ওই ছাত্র। অধ্যাপকরাও তাঁকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। কিন্তু কোনও. কারণে কিউমিলেটিভ গ্রেডেশন পয়েন্ট তাঁর কমে দাঁড়িয়েছিল ৯.১। যে কারণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পারছেন, এই নিয়ে ওই ছাত্রকে বেশ চিন্তাগ্রস্ত দেখাত এবং মুষড়ে পড়েছিলেন। আইআইটির ভিতরে থাকা কাউন্সেলিং সেন্টারে বার তিনেক গিয়েছিলেন। সেখানে কাউন্সেলিং করানোর পর স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পাশাপাশি তদন্তে উঠে এসেছে তাঁর অনেক বন্ধুই সামার ইন্টার্নশিপে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু শাওন সেই সুযোগ পাননি। অথচ অন্যদের তুলনায় তাঁর রেজাল্ট ও স্থান যথেষ্ট ভালো ছিল। তারপরেও বিদেশে যেতে না পারায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছিলেন আইআইটির ওই পড়ুয়া। জেলা পুলিস কর্তরা জেনেছেন স্কুল জীবনে তিনি একটি মেয়েকে একতরফাভাবে ভালোবাসতেন। তিনি আইআইটিতে সুযোগ পাওয়ার পরেও উল্টোদিক থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। যে কারণে তাঁর মধ্যে একটা হতাশা কাজ করছিল। এই সমস্ত কারণেই ওই কৃতী ছাত্র আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত বেছে নেন বলে মনে করছেন জেলা পুলিসের আধিকারিকরা।