• এতো নদী নয়, যেন ডাস্টবিন
    এই সময় | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • প্রবীর কুণ্ডু, তুফানগঞ্জ

    এ নদীর নাম মরা তোর্সা৷ বর্ষায় ফুলেফেঁপে উঠলেও সারা বছর শান্ত থাকে। বয়ে চলে আপন ছন্দে৷ তবে নি:শ্চুপ মরা তোর্সাকে এখন কার্যত ডাম্পিং গ্রাউন্ড বানিয়ে ফেলেছেন গ্রামবাসীরা৷ যথেচ্ছ হারে নদীতে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা৷ প্লাস্টিক ভর্তি বড় বড় বস্তা ফেলা হচ্ছে নদীতে৷ কারও হুঁশ নেই৷ দেখারও প্রয়োজন নেই! নদীকে বাঁচাতে প্রকৃতিপ্রেমী সংস্থাগুলি এগিয়ে এলেও হুঁশ ফেরেনি কারও। পরিবেশপ্রেমী প্রদ্যুৎ সাহা বলেন, ‘নদীকে বাঁচাতে হলে সাধারণ মানুষের সজাগ হওয়া প্রয়োজন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে৷ আসলে নিজের পরিবারের মতো নদীরও যত্ন নিতে হয়৷’

    কোচবিহার শহরাঞ্চল লাগোয়া প্রায় পনেরো কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে মরা তোর্সা। নদীর উপরে রয়েছে সেতু। সেই সেতুর নীচে নদী বুজে গিয়েছে প্লাস্টিক আর আবর্জনায়৷ শহরাঞ্চলের মানুষেরযেন এটাই ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়ে উঠেছে ৷ মরা তোর্সা নদীটি কোচবিহার ২ ব্লকের পুণ্ডিবাড়ি এলাকা থেকে মূল তোর্সা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শাখা নদী হিসেবে কোচবিহার ১ ব্লকের গুটিয়াহাটি এলাকায় গিয়ে ফের মূল নদীতে মিশেছে। সারা বছর জল কম থাকায় মৃতপ্রায় নদীর নাম হয়েছে মরা তোর্সা। নদীর এক দিকে কোচবিহার শহরের ৯, ১০ নম্বর ওয়ার্ড।

    ওপারে কোচবিহারের বাবুরহাট নীলকুঠি এলাকা৷ জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে মরা তোর্সাকে ঘিরে প্রজেক্ট তৈরি করেছিন জেলা প্রশাসন। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, নদীখাতের ৮ কিলোমিটার এলাকা একশো দিনের কাজের মাধ্যমে খনন করা হবে। প্রকল্পে খরচ ধরা হয় পাঁচ কোটি টাকা।

    নদীতে বোটিং চালু করার সিদ্দান্ত নেওয়া হয়। নদীর দু’ধারে ২০ হেক্টর এলাকা জুড়ে গাছ লাগানোর সঙ্গে পার্ক তৈরিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বাস্তবে কিছুই হয়নি। আপাতত আবর্জনা বুকে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে নদীটি। কেন হয়নি? কোচবিহার পুরসভার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পর্যটনের ভালো সুযোগ ছিল। পর্যটকরা নিরিবিলি পরিবেশের টানে আসত। এখনও আমি হাল ছাড়িনি। আবার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ কিন্তু মরা তোর্সা তো এখন কার্যত ডাম্পিং গ্রাউন্ড? পুরপ্রধান বলেন, ‘পুরকর্মীরা শহরের সংগ্রহ করা আবর্জনা কখনও নদীতে ফেলেন না৷ পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ড আছে৷ নদীকে বাঁচাতে সচেতনতা প্রয়োজন রয়েছে।’

    সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা বাড়াতে নদী লাগোয়া বাসিন্দাদের জন্য একাধিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়েছে ‘অনাসৃষ্টি’। সংগঠনের সম্পাদক সুমন্ত সাহা বলেন, ‘মরা তোর্সা নদীর উপরে লাগামহীন অত্যাচার চলছে৷ আবর্জনা, বস্তা বস্তা প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে। দূষণ ঠেকাতে এলাকার বাসিন্দাদের অনেক বোঝানো হয়েছে। তবে মানুষ সচেতন না হলে নদীকে বাঁচানো যাবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)