এই সময়: ‘সব তীর্থ বারবার...’-এর যে ট্যাগলাইন গঙ্গাসাগরের নামের সঙ্গে বসে গিয়েছিল সেই আদ্যিকাল থেকে, বর্তমানে তা অনেকটাই অতীত। ইতিহাস যেমন বদলানো যায়নি, বদলানো যায়নি ভূগোলও। তার ভৌগোলিক অবস্থান ছিল যা ছিল, এখনও তা–ই রয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে, সাগরদ্বীপের মতো দুর্গম এলাকাতেও পৌঁছনো যাচ্ছে কম সময়ে।
কিন্তু জরুরি অবস্থায়? ভৌগোলিক অবস্থানের সেই যন্ত্রণা আজও রয়ে গিয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গত বছর থেকে সেই অসুবিধাও দূর হয়েছে। অসুস্থদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে চালু হয়েছে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। গত বছর ১৩ জন অসুস্থকে এয়ারলিফ্ট করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল কলকাতায়। এবারও পুণ্যস্নানের আগেই, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৮ জনকে এয়ারলিফ্ট করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ দিনও গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই বৃদ্ধ৷ তাঁদের হেলিকপ্টারে করে হাওড়ার ডুমুরজলা হেলিপ্যাডে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ভর্তি করা হয় এমআর বাঙুর হাসপাতালে৷ গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের জন্য চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। মেলায় অসুস্থ হওয়া পুণ্যার্থীদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল আগেই। রবিবার সকালেই অসুস্থ হওয়া ১ জনকে তাতে করেই সাগর থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে হাওড়ায়।
তীর্থযাত্রীদের জন্য গঙ্গাসাগর মেলায় অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই থাকে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার-নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসা সরঞ্জাম— সবই মজুত থাকে। কিন্তু হৃদরোগ বা এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে সময়টাই সবচেয়ে মূল্যবান বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারলে রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। সেই জন্যই রাজ্য সরকার এই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেছে। সেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের সুবাদেই রবিবার বেঁচে যান উত্তপ্রদেশের বাসিন্দা এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ।
ভিড়ের মধ্যে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মেডিক্যাল ক্যাম্পে। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান ট্রানজ়িয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক হয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে অবিলম্বে কলকাতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ দিন দুপুরে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রমেশ দুবে ও মধ্যপ্রদেশের লখন সিং নামে দুই সত্তরোর্ধ বৃদ্ধকেও এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতায় আনা হয়েছে।
সোমবার আরও পাঁচ জনকে একই ভাবে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘এই মেলার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উদ্যোগ নিয়েছেন। মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতেই রোগীদের সময়ে কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে প্রাণ বাঁচানো যাচ্ছে।’