• নিশ্চিন্তে আর থাকা যাচ্ছে না, ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে বাঘের অস্তিত্ব
    এই সময় | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া

    বাঘিনি জ়িনাত এপিসোড শেষ হওয়ায় যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছিলেন বনকর্মীরা, তা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। যত দিন যাচ্ছে তত নিজের অস্তিত্ব স্পষ্ট করছে জঙ্গ‍লমহলে বহিরাগত ডোরাকাটা। মঙ্গলবার তার পায়ের ছাপ মিলেছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বড়গোড়া নেকড়া এলাকায়। পরে বিকেলের দিকে জানা গিয়েছে, কয়েক কিমি দূরে গঙ্গামান্না নামে একটি এলাকায় নিখোঁজ হয়েছে কয়েকটি ছাগল। এর পরে উদ্বেগ আরও বেড়েছে বন দপ্তরে।

    জ়িনাতের গলায় কলার পরানো থাকায় যে সুবিধা পাওয়া গিয়েছিল, এই বাঘটির ক্ষেত্রে তা পাচ্ছে না বন দপ্তর। নেটওয়ার্ক থাকলে প্রতি মুহূর্তে জ়িনাতের অবস্থান ম্যাপিং করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এই বাঘটিকে টেকনোলজি দিয়ে ট্র্যাক করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বনকর্তাদের ভরসা একমাত্র বাঘটির পায়ের ছাপ, বিষ্ঠা ও মৃত পশুর দেহাবশেষ।

    এ দিন নেকড়া এলাকার বাসিন্দা সিং মুড়া বলেন, ‘কেশরার জঙ্গলে বাঘ এসেছে শুনেছিলাম। ভয়ে ছিলাম। সকালের দিকে দেখি, আমাদের জঙ্গলের পাশে পায়ের ছাপ। এর পর ভয়ে কেউ আর জঙ্গলের দিকে যায়নি। বনকর্মীরা এসে পায়ের সেই ছাপের ছবি নিয়ে গিয়েছেন। এটি যে বাঘের পায়ের ছাপ, তাতে সন্দেহ নেই। এই এলাকায় এত বড় প্রাণী আর নেই।’

    রাইকার জঙ্গল লাগোয়া কেশরার জঙ্গল। বিকেলের দিকে স্থানীয়রা দাবি করেন, সেখান থেকে প্রায় আট কিমি দূরে গঙ্গামান্না বিটে চলে গিয়েছে বাঘ। এতে চিন্তা বেছেড়ে বনকর্তাদের। গঙ্গামান্না অত্যন্ত দুর্গম এলাকা বলেই পরিচিত। পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ, ঝাড়গ্রাম এবং ঝাড়খণ্ডের বনাঞ্চলের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে বনকর্তারা জানাচ্ছেন, শুধু পাগমার্কের উপরে ভরসা করে বাঘের হদিশ করতে হচ্ছে তাঁদের। পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরাগুলিতে এখনও বাঘের কোনও ছবি পাওয়া যায়নি।

    এ দিকে বিকেলে সেই গঙ্গামান্না এলাকায় বেশ কয়েকটি ছাগলের মৃত্যু ঘিরে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মৃত ছাগলগুলির গায়ে দাঁতের দাগ রয়েছে। তবে স্থানীয় বনকর্মীদের দাবি, গত কয়েকদিনে এখানে কুকুরের হামলায় ছাগলের মৃত্যু হয়েছে। এই ছাগলগুলি কুকুরে মেরেছে না বাঘে, তা নিশ্চিত ভাবে বোঝার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠানো হবে। তবে এলাকার মানুষকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।

    কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, ‘ছাগল মারা গিয়েছে বলে খবর দিয়েছেন গ্রামের মানুষ। সব দিক খতিয়ে দেখা হবে। বন্য পশুর হামলায় মারা পড়লে সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’ বাঘ যাতে মানুষের কাছে না আসে তার জন্য বন দপ্তর সবরকমের ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জঙ্গল এলাকার মানুষকে সাবধানে থাকতে হবে। বন দপ্তরের সঙ্গে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

  • Link to this news (এই সময়)