• আদালতের নির্দেশে বন্ধ সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্যবাহী বুলবুলির লড়াই
    এই সময় | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম

    সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্যবাহী বুলবুলি পাখির লড়াইয়ে পড়ল ছেদ! রাজ্য বন দপ্তরের একটি বিজ্ঞপ্তির জেরে এক পরম্পরার পরিসমাপ্তি ঘটে গেল। যার ফলে মঙ্গলবার গোপীবল্লভপুরের রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির প্রাঙ্গণে হল না বুলবুলি পাখির লড়াই। সে জন্য মন খারাপ আয়োজক থেকে শুরু করে বুলবুলি পাখির লড়াইয়ে অংশ নেওয়া স্থানীয় দুই পাড়ার মানুষজনের।

    ওডিশা সীমানা–ঘেঁষা ঝাড়গ্রাম জেলার শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরে রয়েছে গুপ্তবৃন্দাবন মন্দির। গত সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্য ও রীতি মেনেই প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন এই মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হত বুলবুলি পাখির লড়াই। ফি বছর এই অভিনব লড়াই দেখতে ভিড় জমাতেন দূর-দূরান্তের মানুষজনও। মূলত এই পাখির লড়াই হয় উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়া‍, দু’টি পাড়াকে কেন্দ্র করে। যদিও স্থানীয় মানুষজনের দাবি, এ লড়াই বিনা রক্তপাতেই সম্পন্ন হয়, আহত হয় না কোনও পাখি।

    মন্দির প্রাঙ্গণে একটি টেবিলের উপর চাদর বিছানো হয়। তারপর দু’টি বুলবুলি পাখির সামনে একটি পাকা কলা দেখিয়ে লড়াই শুরু হয়। কিন্তু সুকৌশলে সেই পাকা কলাটিকে সরিয়ে নেওয়া হয়। যার ফলে দু’টি পাখি পাকা কলার জন্য নিজেদের মধ্যেই লড়াই করতে শুরু করে। এই লড়াই চলাকালীন একটি পাখি টেবিল ছেড়ে চলে গেলে তাকে পরাজিত বলে গণ্য করা হয়।

    বিজয়ী পাখির মালিকদের হাতে উপহারও তুলে দেওয়া হয় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে। কিন্তু এ বছর দিনকয়েক আগে মকর সংক্রান্তির দিন গোপীবল্লভপুরে বুলবুলি পাখির লড়াই বন্ধ রাখার জন্য নোটিস পান আয়োজকেরা। বন দপ্তরের সেই নির্দেশে এই লড়াইও বন্ধ করে দিতে হয় আয়োজকদের।

    মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বুলবুলি পাখির লড়াই বন্ধের কথা জানান শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের মহন্ত মহারাজ কৃষ্ণ কেশবানন্দ দেবগোস্বামী এবং আয়োজক কমিটির সদস্য সত্যরঞ্জন বারিক। কেশবানন্দ দেবগোস্বামী বলেন,‘৪৫১ বছরের ঐতিহ্য মেনেই প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন বুলবুলি পাখির খেলা চলে এসেছে। সদ্য বন দপ্তরের একটি নোটিস পেয়েছি বুলবুলি পাখির খেলা বন্ধের জন্য। তাই এ বারে রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির প্রাঙ্গণে এই খেলা বন্ধ রাখা হয়েছে।’

    তবে আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য সত্যরঞ্জন বারিক বলেন,‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই বৈষ্ণব পীঠস্থানে এলাকায় সুখ-সমৃদ্ধ-শান্তি স্থাপনের জন্য বুলবুলি পাখির লড়াই করে আসছে। যেহেতু বন দপ্তর থেকে নোটিস এসেছে, তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে এলাকার মানুষের আবেগ ও ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।’

    ফি বছর বুলবুলি পাখির লড়াইয়ে অংশ নেওয়া মালিক মন্টু কুণ্ডু, তপন দেহুরিরা জানান, বছরভর বুলবুলি পাখিদের জন্য পরিচর্যা করে লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ দিনটার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করে থাকেন। যদিও এই লড়াইয়ে কোনও পাখি জখম বা রক্তপাত হয় না। সেই ঐতিহ্যে এ বার ছেদ পড়ায় তাঁদের মন খারাপ।

    তবে এই বুলবুলির লড়াই বন্ধের পক্ষেও রয়েছেন অনেকে। কলকাতার পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য সায়ন্তিকা বসু বলেন,‘শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য বন্যপ্রাণীকে আটকে রেখে কোনও কাজে ব্যবহার করা যায় না। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনকে গুরুত্ব দিয়ে বন দপ্তর যে কাজ করেছে সে ব্যাপারে সহমত পোষণ করছি এবং বন দপ্তরকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’ ও দিকে, অসমে মোষের লড়াই বন্ধ করতে গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশের বিরোধিতায় সে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি হয়েছে বলে খবর। বহু জায়গায় পুলিশ–প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশ থাকলেও নগাঁও ও মরিগাঁওয়ে মোষের লড়াই হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)