• ‘এত ক্যাজ়ুয়াল হবেন না’, পর পর হাতির অপমৃত্যু নিয়ে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট
    এই সময় | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: পর পর দু’বছরে দু’টি হাতির অপমৃত্যু। ২০২৩–এর মাঝামাঝি একটি হাতিকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ় করার পর তার মৃত্যু হয়। ঝাড়গ্রামের কাজলা গ্রামের ঘটনা। তার পর ২০২৪–এর ১৫ অগস্ট সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরে, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের কাছে একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতিকে মশালের আগুনের ছেঁকা দিয়ে, বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে এবং পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে হুলা পার্টির বিরুদ্ধে।

    আবার ওই দিন সকালেই ঝাড়গ্রাম শহরের শ্রীরামপুর তল্লাটে একটি হাতিকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ় করার পর তার আর কোনও খোঁজ নেই, এমনটা অভিযোগ। ওই তিনটি ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। সেই মামলায় বন দপ্তরের কাছে কলকাতা হাইকোর্ট মঙ্গলবার রিপোর্ট তলব করেছিল।

    এ দিন ঝাড়গ্রামের ডিএফও–র জমা দেওয়া হলফনামা দেখে প্রচণ্ড বিরক্ত হন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলিকে প্রধান বিচারপতি সতর্ক করে দেন এই বলে— ‘হয় এখনই এই হলফনামা প্রত্যাহার করুন, না–হলে আমরা জরিমানা করব। একজন আইএফএস অফিসারের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন হলফনামা বরদাস্ত করা হবে না।’

    হাইকোর্টের বক্তব্য, ‘যে প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়েছে, তার উত্তর না–দিয়ে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে আদালতকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আপনারা বিষয়টি একদমই সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না। এত ক্যাজ়ুয়্যাল হবেন না।’

    মামলাকারীর আইনজীবী রৈবত বন্দ্যোপাধ্যায় হাতি রক্ষায় বন দপ্তরের অফিসারদের আন্তরিকতার অভাব নিয়ে এ দিন অভিযোগ তুললে কিছুটা হালকা চালে প্রধান বিচারপতির কটাক্ষ, ‘আমরা মনে করি না, একজন আইএফএস অফিসার এতটা অন্তঃসারশূন্য হবেন। ওঁকে কেউ ইনস্ট্রাকশন দিয়েছেন এমনটা লিখতে। তাই, হয়তো উনি লিখেছেন।’ তার পরেই ঝাড়গ্রামের ডিএফও–র ওই হলফনামা রাজ্য প্রত্যাহার করে নেয়। তিন সপ্তাহ পরে রাজ্যকে ফের হলফনামা দিয়ে এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে হাইকোর্টে। ঝাড়গ্রামের হাতি খুন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছে, সেই মামলার অগ্রগতি নিয়ে পরের দিনের শুনানিতে বন দপ্তরের কাছে হাইকোর্ট তথ্য চেয়েছে।

    জনস্বার্থ মামলা করা সংগঠনের আইনজীবী হাইকোর্টে জানিয়েছেন, গত বছর ১৫ অগস্ট ঝাড়গ্রাম শহরে ঢুকে পড়া হাতিদের একটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে অজ্ঞান করে বন দপ্তর সরিয়ে নিয়ে গেলেও সেই ইস্তক তার আর খোঁজ নেই। মামলাকারী সংগঠনের অভিযোগ, ঝাড়গ্রামের লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিটিকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ় করতে অবৈজ্ঞানিক ভাবে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং অজ্ঞান করার পর তাকে ফের জঙ্গলে ছাড়তে যে ভাবে ক্রেনে করে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তার ফলেই হাতিটি মারা যায়।

    মামলাকারী সংগঠনের আইনজীবীর আরও অভিযোগ, দক্ষিণবঙ্গে হাতির পালকে ঠেকাতে যে সব পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে, তা তামাশার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। হুলা পার্টির ব্যবহার, মশালের ব্যবহার একেবারেই অবৈজ্ঞানিক। এমনকী, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৮০টি হাতিকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ় করে তাদের গলায় বকলস পরিয়ে প্রায় ৮০০ হাতির একটি পালকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে ওই আইনজীবী বলেন, ‘বন দপ্তর হাতিগুলোকে কার্যত খুন করার দায়িত্ব নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই, বন্যপ্রাণীকুলকে বাঁচাতে আদালতের হস্তক্ষেপ খুব জরুরি।’

  • Link to this news (এই সময়)