• মিলনসাগরে সাহেবের সংকীর্তন, বহুরূপীর নাচে জমজমাট গঙ্গাসাগর
    এই সময় | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, গঙ্গাসাগর: আলো আঁধারির মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল এগিয়ে যাচ্ছে গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতটের দিকে। মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে মাইকে বাজছিল অনুপ জালোটার ভজন। আর সমুদ্রতটে কীর্তনের সরে মিশে যাচ্ছিল ভিনরাজ্যের সাধুদের প্রার্থনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন ভাষাভাষীর লক্ষ লক্ষ মানুষের ধর্মাচরণ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল গঙ্গাসাগরের তীরে।

    ঘন কুয়াশায় লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে সমুদ্রে স্নান সারছিলেন কাশীধাম থেকে আসা মহন্ত গিরিরাজ। সূর্য দেবতার পুজো সেরে সমুদ্র তটে দাঁড়িয়ে গিরিরাজ বলেন, ‘মকর সংক্রান্তির এই যোগে সাগর স্নান সেরে দান করা অত্যন্ত শুভ ও ফলদায়ক। মকর সংক্রান্তির দিন সূর্য ধনু রাশি ছেড়ে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। এই দিনটির মাহাত্ম্য অপরিসীম।’ হিমাচল থেকে আসা নাগা সন্ন্যাসী হেমন্ত নাগা বাবাও তাঁর পাশেই স্নান সেরে সূর্যের আরাধনায় ব্যস্ত।

    ভিড়ে পথ হারানোর আশঙ্কায় ভিন রাজ্য থেকে আসা দলগুলির ভরসা বিশেষ রঙের পতাকা। উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের একটি পুণ্যার্থী দলের শুরুতে একটি ফাইবার স্টিকের মাথায় লাগানো ছিল লাল রংয়ের কাপড়। তীর্থযাত্রী দলের সদস্যদের একেবারে সামনে ওই নিশান ধরে হেঁটে চলেছেন এক ব্যক্তি। আর ওই প্রতীক দেখে পিছু পিছু চলেছেন দলের বাকিরা। দলছুট হওয়া আটকাতে এ রীতি দীর্ঘদিনের। কারণ, দলছুট আটকানো। ১০০ জনের ওই দলের অধিকাংশই প্রবীণ। মীনা কুমারী নামের এক বৃদ্ধা ভাঙা হিন্দিতে বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া জানি না। এই প্রথম গঙ্গাসাগরে এসেছি। এখানকার কিছুই আমরা কেউ ঠিকমতো জানি না। আমাদের ভাষা অন্য কেউ বুঝতেও পারবে না। তাই লাল রঙের ওই নিশান দেখে আমরা সকলে একজোট হয়ে সমুদ্র স্নানে এসেছি।’

    এ দিন ভোর থেকেই সাগরের ইসকন শাখার পক্ষ থেকে হরিনাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়। প্রায় ৫০ জনের বেশি বিদেশি ভক্ত এ দিনের শোভাযাত্রায় যোগ দেন। হাজির বেশ কয়েকজন বহুরূপীও। নদিয়ার বাসিন্দা বছর বত্রিশের শান্তি বিশ্বাস তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। বিভিন্ন মেলায় বহুরূপী সেজে ঘুরে বেড়ান। সাগরমেলা শেষে পাড়ি দেবেন প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে। শান্তি বলেন, ‘আমার একটা আশ্রম রয়েছে। সেখানে বেশ কিছু সাধু থাকেন। এই উপার্জনের থেকে কিছুটা মানুষকে দানও করি।’

    ডায়মন্ড হারবারের বুনোর হাটের বাসিন্দা কৃষ্ণা মণ্ডল সেজেছেন রাধা। চড়া মেক-আপের পাশাপাশি চুলে বাঁধা শুকনো রজনীগন্ধার মালা। তিনি সাগরতটজুড়ে নাচ-‌গান, কৃষ্ণের ভজন করছেন। কোলের কাছে আগলে রাখা ফুট খানেকের একটি পিতলের গোপাল। কৃষ্ণার রাধা বেশ দেখে প্রণামীর ডালি ভরে ওঠে। তিনি জানালেন, মেলা থেকে পাওয়া প্রণামীর টাকায় বছরভর চলে গোপাল ‌সেবা। দুই সন্তানের মা কৃষ্ণার এখন দিন কাটে গোপালের সেবা করেই। বছর চল্লিশের কৃষ্ণা বলেন, ‘আমার অভাবী পরিবার। এই জীবনে অভাব থেকে মুক্তিলাভের জন্য তাই গোপালকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্যেক বছর চলে আসি সাগরমেলায়।’

    এ দিন সাগরে পুণ্যস্নান সারেন একঝাঁক মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বঙ্কিম হাজরা, পুলক রায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, রথীন ঘোষ, সুজিত বসু ও অরূপ বিশ্বাস। সকলেই কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রসাদ বিতরণ করেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও সমুদ্র স্নান সেরে মন্দিরে পুজো দেন। সুজিত বসু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুণ্যার্থীদের জন্য সমস্ত সুযোগ-সুবিধার সফল ভাবে আয়োজন করতে পেরে খুশি। এই সাফল্য মুখ্যমন্ত্রীর।’

  • Link to this news (এই সময়)