দিব্যেন্দু সরকার, পুরশুড়া
মকর সংক্রান্তির দিন পৌষালি ধান্য উৎসবে মাতোয়ারা পুরশুড়ার কেলেপাড়া অঞ্চলের কৃষ্ণবাটি গ্রাম। আট থেকে আশি, সকলেই অংশ নিয়েছেন এই উৎসবে। নবান্নের নতুন ধানের উৎসবে যোগ দিতে এসেছেন বাইরে থাকা মানুষও।
২০০৬ সালে প্রয়াত বিধায়ক ও বঙ্গবাসী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিষ্ণুপদ বেরা এই ধান্য উৎসব শুরু করেছিলেন। তাঁ লেখা টুসুর গানে সুর দিয়েছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের হিরণ্ময় ঘোষাল। উৎসব উপলক্ষে নানা ধরনের শিল্প ও কারুকলায় সাজানো হয়েছে পুরো গ্রাম। গ্রামের বিভিন্ন বয়সের মহিলারা ফুল, চালের গুঁড়ো, নানা ধরনের রঙের আলপনায় সাজিয়ে তুলেছেন পুরো পরিবেশ।
সকাল থেকে গ্রাম জুড়ে বহু মানুষ টুসুকে মাথায় নিয়ে বা পালকি করে প্রদক্ষিণ করেন এলাকা। মহিলা থেকে ছাত্রছাত্রী, দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে, বাদ্যযন্ত্রের সুরে তাল মিলিয়ে টুসুর গান ধরেন। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের আহ্বানে পুরশুড়ার কুলবাতপুর উত্তরণ শাখার ব্যবস্থাপনায় এই পৌষালি ধান্য উৎসব কৃষ্ণবাটি গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় শুরু হয়। টুসু নিয়ে এই উৎসব দেখতে আজও বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু লোক আসেন। প্রথমে মাঠ থেকে টুসুকে ধানের ছড়ায় সাজিয়ে নিয়ে আসা হয়।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিরণ্ময় ঘোষাল বলেন, ‘এটা এমন এক অনুষ্ঠান, যেখানে কোনও মঞ্চের প্রয়োজন পড়ে না। গ্রামের আট থেকে আশি, সকলেই আজ শিল্পী। সবাই মিলে এই উৎসবে যুক্ত হই। এখানে কোনও দ্বেষ, অশান্তি, হানাহানি নেই।’
সিঙ্গুর থেকে চন্দন গঙ্গোপাধ্য্যায় এসেছিলেন কৃষ্ণবাটি গ্রামে। কলকাতার বরাহনগর থেকে আসেন অঞ্জলি মণ্ডল। তাঁরা বলেন, ‘এই প্রজন্মের মানুষও জানুন এই উৎসবের মাহাত্ম্য। টুসু কে, তাঁর পরিচয় কী, কেন তাঁকে নিয়ে উৎসব হয়, এই ব্যাপারগুলো আরও বেশি করে জানা দরকার। গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে নতুন ভাবে অনুভব করতে হবে। সেই টানেই আমি ছুটে এসেছি এই গ্রামের উৎসবে।’
টুসুকে পালকি করে নিয়ে যাচ্ছিল খুদে ছাত্র রৌম্যদীপ সামন্ত। ধান দিয়ে সেই পালকি সাজিয়ে তুলেছে ছাত্রী ঈশিতা আদক। তাদের কথায়, ‘আজকাল তো এ সব উঠেই গিয়েছে। অতীতে বাংলায় এই সমস্ত উৎসব প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখন আর সে ভাবে দেখা যায় না। এখানে আমরা সকলে মিলে এই উৎসবের আয়োজন করি। সেই সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করি। দূর–দূরান্ত গ্রাম থেকে বহু মানুষ আসেন আমাদের গ্রামে। আমাদের বার্তা একটাই, এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে সকলে যেন ভালো থাকেন।’