• বড়বাজারে দুর্ঘটনায় দায়ী মিনিবাস চালকের ব্ল্যাকআউট!
    এই সময় | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • দিনকে দিন কলকাতায় কমছে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস। বাজার খারাপ, ডুবন্ত ও ধুঁকতে থাকা এই পেশায় নবীনেরা আসতেই চাইছেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছেন কেবল প্রবীণ চালকেরা। টিমটিম করে যে ক’টা রুটে বাস–মিনিবাস টিকে রয়েছে, সে সব চালাতে গিয়ে অল্প সংখ্যক চালকের উপর অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক ‘বোঝা’ চাপছে, এমনটাই অভিযোগ।

    কিন্তু তাঁদের স্বাস্থ্যের খোঁজ কে–ই বা রাখে? কত বয়স পর্যন্ত এক জন চালকের যাত্রী বোঝাই বাস–মিনিবাস চালানো উচিত? চালক শারীরিক ভাবে ফিট কি না, সেটা কি তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউয়ালের সময়ে নজরে আসে— এ সব প্রশ্ন নতুন করে সামনে আসছে বড়বাজারে মিনিবাস দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যুর পর!

    কারণ, পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দুর্ঘটনার ‘ময়না–তদন্তে’ জানা গিয়েছে যে, চালকের হঠাৎ ‘ব্ল্যাকআউট’ হয়ে গিয়েছিলএবং সে জন্যই তিনি মিনিবাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

    গত শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ মহাত্মা গান্ধী রোড ও কালাকার স্ট্রিটের মোড়ের কাছে হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক বিশ্বনাথ বিশ্বাস মিনিবাসের চাকা ফুটপাথে তুলে দিয়েছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় নাজু বিবি নামে এক পথচারীর। প্রাথমিক ভাবে মিনিবাসের সঙ্গে অন্য একটি বাসের রেষারেষির তত্ত্ব সামনে এলেও পুলিশ সূত্রের খবর, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তেমন কিছু ধরা পড়েনি।

    তার পর মিনিবাসের চালকের ব্ল্যাকআউট হওয়ার কথা জানা যায়। ওই চালককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বনাথের বয়স এখন ৬২ বছর, তাঁর চোখে চশমা। কী কারণে তাঁর ব্ল্যাকআউট হয়েছিল, সেটা খুঁজে বার করতে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, মৃদু হার্ট অ্যাটাকের কারণেও ওই প্রবীণ সাময়িক ভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে থাকতে পারেন।

    শহরের কোন রুটে ক’টা বাস ও মিনিবাস চলে, বাস নিয়ে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছেন কি না, এমনই বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে সরেজমিনে গিয়ে সব কিছুর খোঁজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ইস্তকই পরিবহণমন্ত্রী নিয়ম করে সল্টলেক থেকে বেহালা, গড়িয়া থেকে টালার বিভিন্ন রুটে বাসের হাল–হকিকতের বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বড়বাজারের দুর্ঘটনার বিষয়েও তিনি ওয়াকিবহাল। মঙ্গলবার পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘সরকারি বাসের চালকদের শারীরিক পরীক্ষা আমরা নিয়মিত করাই। বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের চালকরাও যাতে সেই সুবিধে থেকে বঞ্চিত না–হন, সেই ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’

    বড়বাজারে ১০ জানুয়ারি যে মিনিবাস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল, সেটি বিএস–সিক্স ক্যাটিগরির। প্রাথমিক পরীক্ষার পর বাসটিতে যান্ত্রিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তা–ও কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ফেটাল স্কোয়াড (এফএসটিপি) ওই গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করাচ্ছে।

    দুর্ঘটনায় লাগাম টানতে সম্প্রতি বাস–মিনিবাসের মালিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তারা। লালবাজার সূত্রের খবর, প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে বাস–মিনিবাস এবং লরির চালকদের মেডিক্যাল টেস্ট করানোর বিষয়ে নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। চালকদের শারীরিক ভাবে ফিট থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা পরিবহণ বিভাগের পাশাপাশি মেনে নিচ্ছে বাস–মিনিবাস মালিক সংগঠনগুলোও।

    অল বেঙ্গল বাস–মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সব ঠিকঠাক আছে, এমন মেডিক্যাল সার্টিফিকেট থাকলে তবেই যাত্রিবাহী গাড়ির চালানোর জন্য লাইসেন্স রিনিউ করা হয় কোনও চালকের। তবে চালকের বয়সের কোনও সীমা নেই। একজন ৩০ বছর বয়সের চালকও শারীরিক ভাবে আনফিট হতে পারেন। চালকদের শারীরিক পরীক্ষা অবশ্য রাজ্য জুড়েই করা হবে।’ হাওড়া বাস–মিনিবাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’–এর সঞ্জয় পাত্র বলছেন, ‘বহু রুটে বাস–মিনিবাস কমছে নানা কারণে। এখন আর এই পেশায় নতুন করে কেউ আসতেও চাইছেন না। এখনও যে সব চালক আছেন, তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে।’

  • Link to this news (এই সময়)