একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের সমান উচ্চতার তেলিয়া ভোলা, ৫-৬ বছরের বাচ্চার সমান আড় মাছ। চুনো পুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, রুই, কাতলা থেকে ভেটকি, ইলিশ— বাদ নেই কেউ-ই। এমনই সব মাছের পসার নিয়ে ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরেক কেষ্টপুর জমজমাট মাছের মেলা। ফি-বছর এই মাছের মেলা দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমান। এ মেলায় একটা তেলিয়া ভোলার ওজন ৪৫ কেজি, ৩০ কেজি ওজন আড় মাছের। রুই-কাতলাও নেহাত ছোটোখাটো নয়। এ ছাড়া চিংড়ি থেকে কাঁকড়া, ক্রেতার অপেক্ষায় তারাও।
শোনা যায়, এ মেলার বয়স ৫০০ বছরের বেশি। চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম শিষ্য রঘুনাথ দাস গোস্বামীর বাড়ির পাশে বসতো এই মাছের মেলা। শোনা যায়, এই মেলা আসলে উত্তরায়ণী মেলা। তবে এ মেলার পরিচিতি মাছের মেলা নামেই। এই মেলা ঘিরে রয়েছে কাহিনি।
শোনা যায়, দেবানন্দপুরের কেষ্টপুর এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তাঁর ছেলে রঘুনাথ গার্হস্থ্য জীবন ছেড়ে সন্ন্যাস নেবেন বলে ঠিক করেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দীক্ষা নেবেন বলে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি যান। কিন্তু তখন রঘুনাথ মাত্র ১৫ বছরের কিশোর। তাই নিত্যানন্দ তাকে দীক্ষা দিতে রাজি হননি। রঘুনাথকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। নিজের ভক্তির পরীক্ষা দিয়ে ৯ মাস পর কেষ্টপুরে বাড়ি ফেরেন রঘুনাথ।
এ দিকে ছেলে বাড়ি ফেরার আনন্দে বাবা গোবর্ধন গোস্বামী গ্রামের লোকজনকে পাত পেড়ে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের লোকজন আবদার করেছিলেন, কাঁচা আমের ঝোল আর ইলিশ মাছ খাবেন। এর পরই বাড়ির পাশের আম গাছ থেকে আম পাড়া হয়। পাশের জলাশয়ে ফেলা হয় জাল। সেই জলাশয় থেকে জোড়া ইলিশ মাছ ওঠায় সকলে তাজ্জব হয়ে যান। রঘুনাথের ভক্তির কারণেই পুকুরে জোড়া ইলিশ উদ্ধার হয় বলে বিশ্বাস করেন এলাকার লোকজন।
এলাকার লোকজন জানান, সেই থেকে প্রতি বছর স্থানীয় রাধা গোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি ভক্তরা মাছের মেলার আয়োজন করেন। দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী, পুকুরের মাছের পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছেরও পসরা নিয়ে হাজির হন। হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া থেকে মানুষ আসেন এই মেলায়। ৫০০ টাকা থেকে দেড়-দু’ হাজার টাকা কেজি দরে মাছ বিক্রি হয়।
এখানে লোকজন শুধু মাছ কিনতে আসেন এমনই নয়, মাছ কিনে পাশের আম বাগানে মাছ-ভাতের পিকনিকও করেন অনেকে। এই মাছের মেলা কার্যত এখন গ্রামীণ মেলার চেহারা নিয়েছে। নাগরদোলা, বাচ্চাদের খেলনা, হরেক রকমের জিনিস, জিলিপি, মিষ্টি, ফুচকার দোকানও বসে।