• শীতের সময়ে আগুনের শঙ্কায় ভোগে উত্তরের জঙ্গল
    এই সময় | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার 

    শীতের রুক্ষতা গ্রাস করে জঙ্গলকে। তড়িৎ সবুজ অরণ্য একটু একটু করে হলদেটে হয়ে যেতে থাকে। শাল, সেগুন, অর্জুনের পাতা খসানোর কাজ শুরু হয়। মাটির উপর গাছের পাতার শুকনো স্তুপ বাড়তে থাকে। সবুজ ঝোপ শুকিয়ে মলিন হয়ে যায়। ফাল্গুন, চৈত্রে এই জঙ্গল আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে।

    এই শুষ্ক খটখটে জঙ্গল তখন একটু আগুনের স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে এলেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। মুহূর্তেই একটার পর একটা জঙ্গলের কম্পার্টমেন্ট পুড়ে খাঁক হয়ে যায়। এই দৃশ্য শুষ্ক সময়ের ডুয়ার্স–তরাইয়ের মানুষের কাছে ভীষণ চেনা।

    শিলিগুড়ির অদূরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের জঙ্গলে রাখাল, গো–পালকদের দল শুকনো পাতায় আগুন লাগিয়ে দেয়। বৃষ্টির দেখা যখন মেলে না, তখন প্রথম বৃষ্টিতে যাতে মাটি ভালো করে ভিজে গিয়ে নতুন ঘাস গজিয়ে ওঠে, সেই জন্যে এই আগুন লাগানো হয়। অনেকে আবার কালো ধোঁয়া দ্রুত কালো মেঘ তৈরি করবে, সেই বিশ্বাস থেকে আগুন লাগান।

    কখনও আবার পিকনিকের দলের ফেলে আসা উনুনের আগুন কিংবা সামান্য ছুড়ে ফেলা সিগারেট বা বিড়ির আগুন দাবানলের কারণ ঘটায়। আগুন যখন নেভে তখন অনেকটা এলাকাজুড়ে ক্ষতির দাগ রেখে যায়। শুধু যে কচি থেকে বুড়ো গাছ পুড়ে খাঁক হয় তা নয়, একইসঙ্গে মাটিতে থাকা ময়ূরের ডিম, বুনো মোরগের ছানা, অজস্র পোকা, প্রজাপতি, পাখি পুড়ে যায়। ক্ষতি হয় জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের।

    ফেব্রুয়ারি থেকে মূলত এই আগুনের শঙ্কায় ভোগে উত্তরের জঙ্গল। বন দফতর আগুন রোধে তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জোরকদমে। রাজ্য বন দফতর থেকে ইতিমধ্যেই ফায়ার লাইন তৈরির কাজ চূড়ান্ত করে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক প্রতিটি বিভাগেই কর্মীরা ফায়ার লাইনের কাজ করছেন। কালিম্পং বন বিভাগের ডিএফও চিত্রক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের সব জঙ্গলেই সংস্কার ও প্রয়োজনে নতুন স্থান নির্বাচন করে ফায়ার লাইন তৈরির কাজ চলছে।’

    পাহাড়ি ঢাল যে এলাকায় যত বেশি, সেখানেই আগুনের ছড়িয়ে পড়া খুব বেশিমাত্রায় ঘটে বলেই নীচুতলার বনকর্মীদের দাবি। পাশাপাশি তিস্তার মতো বড় নদীর কাছাকাছির জঙ্গলে সন্ধ্যার পর যে হাওয়া বয়, তাতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু ভয় থাকলেও তা নিরসনের উপায় খুব বেশি এখনও গড়ে ওঠেনি। পরিবেশপ্রেমীদের মতে, ফায়ার ফাইটিংয়ের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় দমকল দিয়ে আগুন নেভানোর সেকেলে পদ্ধতি অনেকটা বেশি সময় নেয়।

    পরিবেশপ্রেমী শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে বলেন, ‘মাটিতে জমে থাকা শুকনো পাতার স্তূপ যদি বন দফতর নিজেরাই নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ভাবে পুড়িয়ে ফেলে, তাহলে পরবর্তীতে আগুন লাগার সম্ভাবনা যেমন কমবে, তেমনি বর্ষার আগে জঙ্গলে নতুন গাছ গজাতেও সাহায্য করবে।’

  • Link to this news (এই সময়)