• শীতকালেই কি জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বাঘের উপদ্রব বাড়ে? বিশেষজ্ঞরা কী জানাচ্ছেন? 
    আজকাল | ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • বিভাস ভট্টাচার্য: জঙ্গল ছেড়ে সন্দেশখালি বিট অফিসের পাশে বসে ছিল বাঘটা। বহু চেষ্টা করেও তাকে ফেরানো যায়নি জঙ্গলে। শেষপর্যন্ত পাতা হয়েছিল খাঁচা। যেখানে ছিল না কোনও টোপ। অথচ বাঘটা নিজে থেকেই ঢুকে গিয়েছিল সেই খাঁচার ভিতর। এই মুহূর্তে সেই বাঘের ঠিকানা ঝড়খালি টাইগার রেসকিউ সেন্টার। রাজ্যের বন বিভাগের প্রাক্তন বনবল শীর্ষ বা হেড অফ ফরেস্ট ফোর্স রবিকান্ত সিনহা এই ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে জানান, ‘‌বাঘের এহেন ব্যবহার দেখে মজাই পেয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা গেল বাঘটির দাঁত বলতে গেলে আর সেভাবে কিছু ছিল না। মনে হয়েছিল বাধ্য হয়েই সে জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল।’‌ 

    কিন্তু এর বাইরেও অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ের দিকে চলে আসছে বাঘ। সদ্য কুলতলির মৈপীঠে এলাকায় বাঘের ‘‌অনুপ্রবেশ’‌ নিয়ে যথেষ্টই আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। কখনও গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গল থেকে ফের সুন্দরবনে ফিরিয়ে আবার কখনও খাঁচাবন্দি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন বন দপ্তরের কর্মীরা। এত ঘনঘন বাঘ ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে শীতকালেই কি বাঘ জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ের দিকে আসে? 

    রবিকান্ত সিনহা’‌র মতে, ‘‌জঙ্গলের মধ্যে পানীয় জলের যে স্বাভাবিক উৎস বা সোর্সগুলো থাকে সেগুলোতে শীতকালে জল কমে যায় বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুকিয়েও যায়। ফলে বাঘের খাদ্য যেমন হরিণ, শুয়োর বা অন্যান্য প্রাণীরা জলের খোঁজে দূরে চলে যায়। বাঘ এবার তার শিকারের খোঁজ করতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়। সেটা কখনও কখনও জঙ্গলের লাগোয়া কোনও গ্রাম হতে পারে। এরপর সেখানে গিয়ে তাদের স্বভাব হল এলাকা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করা। সেটা করতে গিয়েই তারা মানুষের চোখে ধরা পড়ে।’‌ 

    তবে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ বা এসটিআর–এর প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ারের বর্তমান ডিরেক্টর নীলাঞ্জন চক্রবর্তী এবিষয়ে বলেন, ‘‌শীতের সময় একটা ব্রিডিং সিজন বা প্রজননের মরসুম থাকে। যেটার জন্য বাঘ এদিক ওদিক চলে যায়। আবার শীতের কুয়াশার জন্য অনেকসময় পথ ভুলেও চলে যায়। যদিও ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই আবার তারা নিজেরাই ফিরে আসে। আবার তাদের লোকালয়ে চলে আসার পিছনে আরেকটি যে প্রবণতা সেটা হল গ্রামের পাশে যে জঙ্গল সেটাও একেবারেই তাদের এলাকার মতোই। ফলে সেটার কারণেও তারা চলে যায়।’‌ 

    এর পাশাপাশি আরেকটি কারণ হল অন্য বাঘের ধাওয়া। বাঘ ও সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা প্রখ্যাত সংগঠন ‘‌শের’‌–এর সম্পাদক জয়দীপ কুণ্ডু এবিষয়ে বলেন, ‘‌গ্রামের ধারে যে জঙ্গল সেটার সঙ্গে নিজের এলাকার জঙ্গলের মিলের জন্য যেমন বাঘ নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যায় তেমনি অন্য বাঘের তাড়া খেয়েও জঙ্গল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। শক্তিশালী কোনও অল্পবয়সী বাঘ যদি তার তুলনায় বয়স্ক ও দুর্বল বাঘকে তাড়া করে তবে সে বাঁচার জন্য জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই পারে।’‌ 

     

     
  • Link to this news (আজকাল)