• দুই শিশুকন্যার সামনে শাবল মেরে স্ত্রীকে খুন
    বর্তমান | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: আউশগ্রামের যদুগড়িয়া গ্রামে ছোট দুই মেয়ের সামনেই শাবল দিয়ে মেরে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করে স্বামী। এমনকী, দু’দিন ধরে স্ত্রীর দেহ কাপড় ও প্লাস্টিক দিয়ে জড়িয়ে ঘরের মেঝে খুঁড়ে পুঁতে রেখেছিল সে। মঙ্গলবার রাতে খবর পেয়ে পুলিস ঘরের মেঝের মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে। পুলিস জানিয়েছে, মৃতার নাম লক্ষ্মী হাঁসদা(২৭)। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বুধবার অভিযুক্ত সোম হাঁসদাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। এদিন তাকে বর্ধমান আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিন পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার সায়ক দাস বলেন, খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। 


    পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় আট বছর আগে ধৃত সোমের সঙ্গে লক্ষ্মীর বিয়ে হয়। লক্ষ্মীর বাপেরবাড়ি দেওয়ানদিঘি থানার জুনড়া গ্রামে। সোমের একটি দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে সে শিবদা গ্রামে প্রথম বিয়ে করে। প্রথমপক্ষের স্ত্রী যদুগড়িয়া এলাকাতেই আলাদা বাড়িতে থাকেন। মৃত লক্ষ্মীর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ছ’বছর ও ছোট মেয়ের আড়াই বছর বয়স। সোম কোনও কাজকর্ম করত না সে। মদ্যপ অবস্থায় প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করত। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে অশান্তি হতো। স্ত্রী লক্ষ্মী দিনমজুরি করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। মৃতের মামাতো ভাই কালীচরণ হেমব্রম আউশগ্রাম থানায় খুনের অভিযোগ করেছেন। 


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে লক্ষ্মীকে পিটিয়ে খুন করে সোম। তারপর প্রমাণ লোপাট করতে ঘরের এক কোণে হাঁটুসমান গর্ত কাটে। সেখানেই স্ত্রীর দেহ পুঁতে রাখে। সেই দৃশ্য দুই মেয়ে দেখে। তাদেরও একই পরিণতি হবে বলে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখে সোম। এরপর সে ওই ঘরে শিকল তুলে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। মঙ্গলবার বিকেলে পাশের বাড়িতে গিয়ে ঠাকুমা পানমণি হাঁসদাকে মায়ের খুনের কথা জানায় মৃতার বড় মেয়ে। তারপরই ঘটনা জানাজানি হয়। পুলিস এসে গ্রাম থেকে সোমকে গ্রেপ্তার করে। তার চোখেমুখেও কোনও আক্ষেপের ছাপ দেখা যায়নি। 


    ধৃতের মা পানমণি হাঁসদা বলেন, আমি নাতনিদের কাছে খবর পেয়ে বউমাকে খুঁজতে যাই। ছেলে জানায়, বউমাকে মারধর করায় সে পালিয়ে গিয়েছে। ওর এই কথায় আমার সন্দেহ হয়। তখন বাকি ছেলেদের খবর দিই। তারা এসে ঘরে ঢুকতে গেলে সোম বাধা দেয়। ওই ঘরে তালা লাগিয়ে দেয় ছেলে। পুলিস এসে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে মৃতদেহ উদ্ধার করে। এভাবে বউমাকে খুন করবে, তা ভাবতেও পারিনি। 


    এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এক কামরার অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশীরা। ছোট দু‌ই মেয়ের সামনেই যেভাবে সোম স্ত্রীকে নৃসংশভাবে খুন করেছে তা শুনে অনেকে আঁতকে উঠছেন। দোষীর চরম শাস্তির দাবি তুলেছেন মৃতার বাপেরবাড়ির লোকজন। মৃতার মামাতো ভাই কালীচরণ হেমব্রম বলেন, আমরা দিদির খুনের খবর পেয়ে এসেছি। দিদির বড় মেয়ের কাছে সমস্ত ঘটনা শুনলাম। জামাইবাবু যে এমন কাণ্ড ঘটাবে, তা ভাবতে পরিনি। আমরা ওর কঠোর শাস্তি চাই। 
  • Link to this news (বর্তমান)