জলের দাবিতে কুলটিতে সেইলের কারখানায় বিক্ষোভ, সিআইএসএফের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
বর্তমান | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কুলটিতে জলের আকাল দেখা দিয়েছে। প্রতিবাদে সেইলের কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দারা। বুধবার সকাল থেকে দিনভর এনিয়ে আন্দোলনের জেরে উত্তপ্ত ছিল এলাকা। বাসিন্দাদের সঙ্গে দফায় দফায় সিআইএসএফের ধস্তাধস্তি হয়। বাসিন্দাদের সমর্থনে আন্দোলনে যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাও। কেন্দ্রীয় সংস্থা মানুষকে জল না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অসুবিধায় ফেলছে বলে অভিযোগ তোলে তারা। আধিকারিকদের গাড়ি আটকেও তুমুল বিক্ষোভ চলে। এদিন দুপুরে আন্দোলনকারী ও কারখানা কর্তৃপক্ষের বৈঠকেও সুরাহা মেলেনি। যার জেরে বিকাল পর্যন্ত কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভ চলতে থাকে। সেইল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই আন্দোলনের জেরে কারখানায় যে বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল তা থমকে যেতে পারে।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, এলাকার মানুষকে কারখানা কর্তৃপক্ষ জল দিতে বাধ্য। যতদিন না তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন আমরা আন্দোলনে থাকব।
প্রসঙ্গত, কুলটিতে ইস্কো কারখানার একটি অংশ ছিল। সেইল ইস্কো অধিগ্রহণ করার পর এই কারখানা সেইল গ্রোথ ওয়ার্কস নামে চলতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরেই এই কারখানা সংলগ্ন এলাকা এবং ইস্কো টাউনশিপে জল সরবরাহ করত কারখানা কর্তৃপক্ষ। কয়েকমাস ধরেই সেই জল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। যা নিয়ে একাধিকবার আন্দোলনও হয়েছে। এদিন সেই আন্দোলন অনেক বেশি তীব্র ছিল। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, কতমাস এভাবে জল না পেয়ে আমরা দিনযাপন করব। এলাকাবাসীর আন্দোলনে কুলটির প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কুলটির তৃণমূল নেতারা যোগ দেওয়ায় তা অন্য মাত্রা পায়। আন্দোলনের চাপে কারখানার গেট বন্ধ করে দিতে হয় সিআইএসএফকে। তারপরও আন্দোলনকারীরা সিআইএসএফের বাধা টপকে কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করে। যা নিয়ে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে কারখানার আধিকারিকরা গাড়ি নিয়ে কারখানায় ঢুকতে চাইলে তাঁদের গাড়ি আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। সিআইএসএফ বল প্রয়োগ করে তাঁদের সরাতে গেলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। কারখানার ভিতরে ঢুকে পড়ে অনেকে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয় সেইল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘক্ষণ পর কারখানা থেকে বেরিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, বৈঠক ফলপ্রসু হয়নি। কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষকে জল দিতে চায় না।
এরপরই সিদ্ধান্ত হয় বৃহস্পতিবার সেইলের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের সঙ্গে বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত কারখানার গেট অবরূদ্ধ থাকবে। কারখানা থেকে শ্রমিকদের বের হতে দেওয়া হলেও আধিকারিকদের কারখানার ভিতরই আটকে রাখা হবে। বিকেল পর্যন্ত কোনও আধিকারিককে গেটের বাইরে বের হতে দেয়নি আন্দোলনকারীরা।
সেইল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বরাকর থেকে পাইপ লাইনে জল আসে। কারখানায় জল আসার আগেই বিপুল পরিমাণ জল চুরি করে নেওয়া হচ্ছে। যতটুকু জল পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই আবাসন, এলাকায় জল দেওয়া হচ্ছে। তাদের আরও অভিযোগ, যাঁরা জলের দাবি করছেন তাঁরা জবরদখল করে আছেন। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এই কারখানার জন্য ২১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে। স্টিল ফাউন্ড্রি প্রকল্প সম্প্রসারণ করা হবে। সাড়ে ৩০০ নতুন মানুষ কাজ পাবেন। ধারাবাহিক আন্দোলনে তা ভেস্তে যেতে পারে। কারখানার চিফ জেনারেল ম্যানেজার শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, যত বেশি সম্ভব জল দেওয়া যায় তা দেওয়া হচ্ছে।