মোদি জমানায় সম্পদ বৃদ্ধি শুধুই ধনীদের, দুর্দশাই নিয়তি মধ্যবিত্তের
বর্তমান | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘টপ টু হান্ড্রেড ক্লাব’ বনাম মধ্যবিত্তের দুর্দশা! এ যেন প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। ২০২৪ সালের ভারত দেখেছে একঝাঁক ব্যর্থতা। জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছে বিপজ্জনকভাবে। মূল্যবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী। শিল্পোৎপাদন হার তলানিতে। রপ্তানি কমেছে, আমদানি বেড়েছে। গড় আয় কমেছে। গত ২ বছর ধরে বেসরকারি সেক্টরে গড় বেতন বৃদ্ধি থমকে। কর্পোরেটের হায়ারিং অর্থাৎ নিয়োগ বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সবথেকে কম। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কে ডিপোজিট হার কমে গিয়েছে। অর্থাৎ আম জনতার সঞ্চয় কমেছে। এত সব কমে যাওয়ার মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম কী? একশো কোটি ডলারের সম্পদশালীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ২০২৩ সালে ভারতে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা ছিল ১৫৭। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের পরিসংখ্যান হল, এক বছরে ৪৪ জন বিলিওনিয়ার বেড়েছে। এই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। মোট বিলিওনেওয়ারের সংখ্যা এখন ২০১। তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ? ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি ডলার। সবথেকে ধনী ব্যক্তি এখনও মুকেশ আম্বানি। তাঁর সম্পদ ৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। দ্বিতীয় গৌতম আদানি। প্রায় তাঁর কাছেই। আম্বানির সম্পদ ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের। সেক্ষেত্রে আদানির ১০ হাজার কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে এইচসিএল টেকনোলজির শিব নাদার। ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। চতুর্থ সান ফার্মার মালিক দিলীপ সাংভি। পঞ্চম আজিম প্রেমজি।
ভারতের গরিব যখন আরও গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্ত যখন নিজের অজান্তেই প্রবেশ করছে নিম্নবিত্তের ব্র্যাকেটে। আর সেই সময় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সমস্ত লিস্টেড কোম্পানির মিলিত মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে ৫ লক্ষ কোটি ডলার ছাপিয়ে গিয়েছে। শেয়ার মার্কেট ক্র্যাশ করলে ভুগছে আম জনতার রিটেল লগ্নি, যাঁরা সামান্য টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে রাখেন। শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত কর্পোরেটদের কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে না। কারণ কী? কারণ ফাঁপানো শেয়ার বাজারে গত ৮ বছর ধরে মধ্যবিত্ত বিপুল টাকা লগ্নি করে বসে আছে। ভুগছে তারাই। এই শ্রেণির হাতেই আজ টাকা নেই। তাই ভোগ্যপণ্য ক্রয়-বিক্রয় তলানিতে। শহরে কাজ নেই। তাই ১০০ দিনের কাজের পাহাড়প্রমাণ চাহিদা। অথচ, ২০২৪ সালে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে মজুরির গড় বৃদ্ধি কত হয়েছে? ২৮ টাকা!
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া রিসার্চ রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী ইদানীং বলে থাকেন, ‘বিরোধীরা সরকারকে অপবাদ দিচ্ছে। সত্যিটা হল, অন্তত ২৫ কোটি গরিব কমে গিয়েছে। আর এই দারিদ্র্য হ্রাসের পরিসংখ্যান দিয়েছে খোদ এসবিআই রিসার্চ।’ কিন্তু অর্থনৈতিক মহলের দাবি অন্যরকম। তাদের প্রশ্ন, এসবিআই রিসার্চ কোন মাপকাঠিতে দারিদ্র্য মাপছে? বলা হয়েছে গ্রামীণ এলাকায় মাসে ১৬৩২ টাকার কম যারা ব্যয় করে (মাথাপিছু ব্যয়) তারা গরিব। শহুরে এলাকায় যারা ১৯৪৪ টাকার কম খরচ করে প্রতি মাসে, তারা গরিব। এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট যে, দরিদ্র হওয়ার মাপকাঠি কী? অর্থাৎ এই ব্যয়ক্ষমতার উপরে যারা বাস করে তারা গরিব নয়! ভারতের জিডিপি কত? সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি ডলার। প্রায় দেড় লক্ষ কোটি ডলারই ২০১ জনের হাতে! তাঁদের জন্য মোদি সরকারের কোন স্লোগান প্রযোজ্য? বিকশিত ভারত!