বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: তিনি কি ‘সব্যসাচী’? না হলে কীভাবেই বা একসঙ্গে দু’টি টেবলে লাগাতার অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন? মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্যালাইন বিতর্ক এবং প্রসূতি মৃত্যু নিয়ে ১৩ সদস্যের কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে এই প্রশ্নই উঠছে। ৮ এবং ৯ জানুয়ারি গাইনি বিভাগের ‘ওটি রেজিস্টার’ দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত কমিটির সদস্যরা। কারণ, রেজিস্টারে লেখা রয়েছে, মিনারা বিবি থেকে রেখা সাউ—পাঁচ প্রসূতিরই সিজার করেছেন ‘কর্তব্যরত’ এক আরএমও। মিনারা বিবির অপারেশন শুরু হয় ৮ জানুয়ারি রাত ১০টা ২০ মিনিটে। শেষ হয় রাত ১২টা ১৫ মিনিটে। আবার মামনি রুইদাসের (মৃতা) সিজার শুরু করেন প্রধান সার্জেন (আরএমও) মিনারার অপারেশন চালাতে চালাতেই? কারণ নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, রাত ১১টা ৫ মিনিটে মামনির অস্ত্রোপচার শুরু করে দিয়েছেন তিনি। তা শেষ হচ্ছে রাত ১২টা ২৫ মিনিটে। মিনারার অপারেশন শেষ হওয়ার ১০ মিনিট পর। এখানেই শেষ নয়, ৮ জানুয়ারির রাতে সেই কর্তব্যরত আরএমও আরও সিজার করেছেন বলে লেখা রয়েছে। এই অদ্ভুতুড়ে টাইমলাইন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিটি। তারা রিপোর্টে জানিয়েছে, ‘সার্জারির সময়গুলি একটার সঙ্গে আর একটা জড়িয়ে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি (আরএমও) সার্জারিগুলি সম্পূর্ণই করেননি।’ রীতিমতো কটাক্ষ করে কমিটি লিখেছে, ‘সময়ের ফাঁক দেখে এও মনে হচ্ছে, সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে তিনি দু’টি টেবলে একসঙ্গে অপারেশন চালিয়ে গিয়েছেন!’
জিজ্ঞাসাবাদে নার্স এবং অপারেশন থিয়েটারের কর্মীরা জানিয়েছেন, সেই রাতে কোনও সিজারই আরএমও করেননি। তিন ও চার নম্বর পাতায় লেখা রয়েছে, ‘অপারেশন থিয়েটারের কর্মীরা জানিয়েছেন, ওইদিন রাতে দু’টি ওটি টেবলে একইসঙ্গে অপারেশন চলছিল। কিন্তু আরএমও রাতের ৫টা সিজারের একটিও করেননি। সবক’টিই করেছেন পিজিটি ও ইন্টার্নরা। তাঁদের সহযোগিতা করেছেন একজন ওটি টেকনোলজিস্ট! সিজার শুরুর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে সন্তান প্রসব হলেও ক্ষতস্থান বন্ধ করা হয়েছে দীর্ঘসময় পর।’ এই রিপোর্টেই সিলমোহর দিচ্ছে সিআইডি। কারণ প্রাথমিক তদন্তের পর তারা দাবি করেছে, ওই রাতে সিনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে অন্তত দু’জন হাসপাতালেই ছিলেন না। তাঁরা ব্যক্তিগত প্র্যাকটিস করতে চলে গিয়েছিলেন। খাতায় কলমে তাঁদের উপস্থিতি শুধু দেখানো হয়েছে। ৮ ও ৯ জানুয়ারির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং মোবাইল টাওয়ারেও তাঁদের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
বুধবার প্রিন্সিপালও জেরায় জানিয়েছেন, ওটি রুমে সেদিন কোনও সিনিয়র ডাক্তার ছিলেন না। জিজ্ঞাসাবাদ হয় ময়নাতদন্তকারী তিন ডাক্তারেরও। তদন্তকারীরা জানতে চান, দেহে কী ধরনের আঘাত ছিল? কোথায় ছিল? এই আঘাত কি অপটু হাতের জন্য হয়েছে? একইসঙ্গে আধিকারিকরা জোর দিচ্ছেন স্যালাইন বিতর্কেও। ওই ব্যাচের এক ইউনিট স্যালাইন তাঁরা রিক্যুইজিশন দিয়ে সংগ্রহ করেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, তাতে কিছু গোলমাল রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার পরই সে ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন তাঁরা।