নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কীভাবে ভাঙল নেতাজি নগরের বিদ্যাসাগর কলোনির চারতলা বাড়িটি? মঙ্গলবার থেকে এ নিয়ে কাটাছেঁড়া করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা একপ্রকার নিশ্চিত, মাটিতে বসে যাওয়া বাড়ি হাইড্রলিক জ্যাক দিয়ে সোজা করতে গিয়েই বিপত্তি ঘটেছে। কিন্তু বহুতলটি মাটিতে বসে যাচ্ছিল কেন? বুধবারও এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে মেলেনি। কলকাতা পুরসভা তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, বামফ্রন্টের পাপের বোঝা তৃণমূলকে নিতে হচ্ছে। ওই আমলেই জলাজমিগুলি ভরাট হয়েছে। এই বহুতলটি ভাঙার সময় আশপাশের বাড়ি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা দেখার জন্য পুরসভার অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলোনির বাসিন্দাদের অনুরোধ, প্ল্যান জমা দিয়ে অনুমতি নিয়ে বাড়ি তৈরি করুন।
মঙ্গলবার ঘটনার পরই বহুতলটি ভাঙার কাজ শুরু করেছিল পুরসভার ডেমোলিশন স্কোয়াড। কাজ করতে গিয়ে গোটা বাড়ি যেন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে না পড়ে তা দেখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া হয়। বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান যাদবপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তী। হেলে পড়ে থাকা বহুতল কোন প্রক্রিয়ায় ভাঙা উচিত, সে সংক্রান্ত পরামর্শ দেন।
আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে বাড়িটি পিসার হেলানো টাওয়ারের মতো ধীরে ধীরে হেলে যাচ্ছিল। ওই জমির পিছনের অংশে ছিল একটি ডোবা। সে জলাশয় ভরাট করে এই ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু পাইলিং হয়নি। জমির সয়েল টেস্টও হয়নি। এই ধরনের জলাজমিতে মাটি-বালি ফেলে, ইট পেতে কংক্রিটের বেস তৈরি করতে হয়। এই কাজ করেননি প্রোমোটার। কিন্তু কলকাতা পুরসভার এক কর্তা বলেন, কেন বহুতল মাটিতে বসছিল তা এখনই বলা সম্ভব নয়। মাটির তলায় ভিত নিয়ম মেনে করা হয়েছিল কি না তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে উপরিভাগের নির্মাণে কোনও গাফিলতি প্রাথমিকভাবে নজরে আসছে না। চারতলা বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে যত ইঞ্চির রড ব্যবহার করে কলাম তৈরি হওয়ার কথা সেটা হয়েছে। কলাম কিংবা বাড়ির দেওয়ালের চওড়া অংশ ঠিকঠাক। তাতে কোনও গলদ থাকলে কিংবা নির্মাণ সামগ্রী খারাপ মানের হলে ১৪-১৫ বছর ধরে টিকে থাকার অবস্থায় থাকত না।
বুধবার ফ্ল্যাটের ভিতর থাকা আসবাবপত্র সরানোর কাজ হয়েছে। যাদবপুরের অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তী বাড়ি ভাঙা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। ঠিক হয়েছে, ডানদিকে হেলে পড়া আবাসনটি বাঁ দিক থেকে দড়ি দিয়ে হালকাভাবে ধরে রাখা হবে। ডানদিকের অংশ ঠেকনা দেওয়া হবে পে লোডার দিয়ে। ভাঙার কাজের সময় পুরোপুরি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে যাতে না পড়ে তার জন্য এই প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে উপর থেকে বহুতলটির ভার কমিয়ে ভাঙতে ভাঙতে নীচের দিকে আসতে হয়। তার জন্যও নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে।’ পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে প্রথমে বাড়ির চারতলার দেওয়াল ভাঙা হবে। তারপর ছোট ছোট টুকরো করে ছাদ ভাঙতে বলা হয়েছে। বাড়ির চারপাশের মূল কাঠামো অর্থাৎ কলাম প্রথমেই ভাঙা হবে না। চারতলা ভাঙার পর একইরকম ভাবে তিন, দোতলা ভেঙে ফেলার কাজ হবে। তারপর ঘা দেওয়া হবে মূল কাঠামোয়।