৫০০ বছরের পুরনো মাছমেলা ঘিরে উৎসবের আবহ ব্যান্ডেলের কেষ্টপুরে
বর্তমান | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: মেলার বয়স পেরিয়েছে পাঁচশো বছর। মাছের মেলা। ছোট বা মাঝারি নয়, বিরাট আকারের মাছ। মাছের আকর্ষণেই বছরের পর বছর পয়লা মাঘে মেলার চেহারা নেয় ব্যান্ডেলের কেষ্টপুর। মানুষের আকর্ষণের কারণেই দেবানন্দপুরের কেষ্টপুর মাছমেলার গ্রাম নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। মেলার পসরা যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই এক অদ্ভুত জনশ্রুতি জড়িয়ে আছে মেলার সঙ্গে। এক বৈষ্ণব সন্ন্যাসীর বাড়ি ফেরার আনন্দে স্থানীয় জমিদার গ্রামজুড়ে ভোজ দিয়েছিলেন। তাই আজও অনেকে মেলা থেকে মাছ কিনে পাশেই কোথাও তা ভাজতে বসে যান। মেলার আশপাশে জমে ওঠে পিকনিকের আসর।
বুধবার তিথি নক্ষত্র মেনে বসেছে মাছমেলা। বহু মানুষ সকাল থেকেই ভিড় করেছিলেন মেলার মাঠে। সপরিবারে এসেছিলেন মাছপ্রেমীদের অনেকেই। বিরাট আকারের শঙ্কর মাছ, পঞ্চাশ কেজি পেরনো ভোলা, বড় আকারের সার্ডিন মাছকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। তবে শুধু এসবই নয়, বড় আকারের পুঁটি থেকে ইলিশ, মানুষ প্রমাণ বোয়াল থেকে বিরাট আকারের মাগুর, রুই-কাতলা থেকে তেলাপিয়া, সব মাছের সম্ভার নিয়েই বসেছিলেন দোকানিরা। ভিন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা যেমন এসেছিলেন, তেমনই অন্য জেলার মানুষও ভিড় করেছিলেন মেলায়। সিঙ্গুর থেকে এসেছিলেন সুবীর সাঁতরা। তিনি বলেন, বহু বছর ধরেই মাছমেলায় আসছি। বড় আকারের মাছ দেখতেও ভালো লাগে। আবার মাছ কিনে সেখানে ভেজে খাওয়ার আনন্দটা অন্যরকম।
মাছ ব্যবসায়ী অতনু হালদার বলেন, বংশ পরম্পরায় মাছ মেলায় আসছে আমাদের পরিবার। বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটা জমিয়ে রাখা হয় মেলার জন্য। শুধু দেখা নয়, কেনার পর মাছভাজা খেয়ে বাড়ি যান অনেকে। এটাই মানুষকে বেশি আকর্ষণ করে।
মেলা নিয়ে উৎসাহ যেমন আছে, তেমনই আছে জনশ্রুতি। শোনা যায়, চৈতন্যদেবের পারিষদ নিত্যানন্দের শিষ্য হতে ঘর ছেড়েছিলেন স্থানীয় জমিদারের ছেলে রঘুনাথ। বহু বছর পর তিনি আবার সংসারে ফেরেন। সেই আনন্দে জমিদার গ্রামে ভোজড দিয়েছিলেন। সেদিন চমৎকার হয়েছিল। অসময়ে আম আর ইলিশ মাছ এনে দিয়ে ভেলকি দেখিয়েছিলেন রঘুনাথ। সেই ইস্তক গ্রামে মেলা করে মাছ খাওয়ার চল হয়।