• অ্যাইখ্যান পরবে ‘নববর্ষ’ উদযাপন জঙ্গলমহলবাসীর
    এই সময় | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম

    কাকভোরে স্নান সেরে ফুল–মালা, প্রদীপ–ধূপ নিয়ে গরাম থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন মাহাতো। গরাম থানে বা গ্রাম দেবতার থানে প্রিয়রঞ্জনের মতো ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোড়, বাঁশপাহাড়ি, শিলদা, বিনপুর, দহিজুড়ি–সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা এসেছিলেন নিজেদের এলাকার গরাম থানে।

    মাঘের প্রথম দিনটা তাঁদের কাছে গরাম ঠাকুরের পুজোর দিন। পোড়ামাটির হাতি ও ঘোড়ার ছলন মূর্তি দিয়ে তাঁরা সারা বছরের জন্য নিজেদের সুখ–সমৃদ্ধির আশীর্বাদ চেয়ে নেন গ্রাম দেবতার কাছে। এই দিনটিকে তাঁরা আইখ্যান পরব বলে থাকেন।

    বুধবার সেই বিশেষ দিন উপলক্ষে উৎসবের মেজাজ জেলায়। মাঘের প্রথম দিনটিকে তাঁরা কৃষি নববর্ষ হিসেবেও উদযাপন করে থাকেন। এ দিন জমিতে হাল চালিয়ে গ্রাম দেবতার কাছে সারা বছর ভালো ফলনের কামনা করেন তাঁরা। জঙ্গলমহলের আদি বাসিন্দাদের বিশ্বাস, আইখ্যান পরবের দিনে গরাম ঠাকুরকে তুষ্ট করতে পারলে সারা বছর ভালো কাটে। সকলকে রক্ষা করেন। সংসার সচ্ছল হয়। দেবতাকে তুষ্ট করতে তাই গরাম থানে হাঁস–মুরগি, পায়রা, ছাগলের বলিও দেওয়া হয়। এ দিন গ্রামে মেলাও বসে।

    এ দিনটা আবার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার শুভ দিন বলে মনে করেন জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা। যাতে তাড়াতাড়ি সুপাত্রে বিয়ে হয় সে জন্য গ্রামের মেয়েদের হাত রাঙিয়ে দেওয়া হয়। আর উৎসব মানেই ভালোমন্দ খাবার। প্রতি হেঁশেলেই তৈরি হয় মাংসের পিঠে, লাউ পিঠে,ভাজা পিঠের মতো লোভনীয় সব খাবার। গরাম থানের মেলাগুলিতে মুরগির লড়াইও হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট পশুপাখিদের নিয়ে এ ধরনের খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

    এ জন্য ঝাড়গ্রামের একটি মন্দিরে বুলবুলির লড়াই বন্ধ হয়ে যায় বন দপ্তরের নোটিসে। এ দিন ঝাড়গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার থাকলেও পদক্ষেপ করার এক্তিয়ার বন দপ্তরের নেই। তবে গ্রামে গ্রামে নোটিস দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন জায়গায় পাখি মেলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। তার নোটিসও দিয়েছে বনদপ্তর। কিন্তু মুরগি লড়াইয়ের উপরে যদি সেই রকম কোনও নির্দেশ দেয়, তারপরে আমরা ভাবনাচিন্তা করে দেখব।’

  • Link to this news (এই সময়)