এই সময়: পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কোনও হাসপাতালে ছাদে এ বার নিয়মিত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স নামবে। তার জন্য প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)।
কাল, শুক্রবার সকালে পরীক্ষামূলক ভাবে রুবি–মোড়ের কাছে একটি হাসপাতালের ছাদে নামবে ওই হেলিকপ্টার। ছাদে তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। শুক্রবার সেখানে উপস্থিত থাকবেন ডিজিসিএ–র প্রতিনিধি। ভারতের আকাশে বিমান ও হেলিকপ্টার পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ করে ডিজিসিএ। তাদের অনুমতি ছাড়া কোনও অসামরিক বিমান বা হেলিকপ্টার উড়তে পারে না। ডিজিসিএ সূত্রের খবর, ব্যস্ত শহরে একটি বাড়ির ছাদে নিয়মিত হেলিকপ্টার নামা–ওঠা করতে শুরু করলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। দেখা হয়েছে, সেই বাড়ির ছাদ হেলিকপ্টার নামা–ওঠা করার উপযুক্ত কিনা।
ডিজিসিএ সূত্রের দাবি, কোনও বাড়ির ছাদে হেলিকপ্টার নাম–ওঠা করলে কয়েকটি শর্ত মানতে হয়। এক, সেই হেলিকপ্টারকে দুই–ইঞ্জিন বিশিষ্ট হতে হবে। এখন এক–ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারও যাত্রীবহন করে। দুই, হেলিকপ্টারে দু’জন পাইলট থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট পাইলটদের এমন ঘিঞ্জি এলাকায়, অন্যান্য নির্মাণ বাঁচিয়ে নামা–ওঠা করার অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।
বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘সমুদ্রের মধ্যে যেখানে তেল তোলা হয়, তার ছাদ থেকে নিয়মিত হেলিকপ্টার পরিষেবা রয়েছে। ওএনজিসি এমন হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। আবার পাহাড়ের দুর্গম স্থানে নিয়মিত হেলিকপ্টার নামা–ওঠা করে। এই দুই জায়গার কোনও একটিতে নিয়মিত নামা–ওঠা করার প্রশিক্ষণ থাকলে তবেই সেই পাইলট শহরের ঘিঞ্জি এলাকার ছাদে নামার অনুমতি পান। পাইলটের সেই রেটিং–ও এ ক্ষেত্রে প্রতিবার খতিয়ে দেখবে ডিজিসিএ।’
তিন, বাড়ির ছাদে হেলিকপ্টার নামা–ওঠার ক্ষেত্রে কোনও বাধা রয়েছে কিনা, তাও গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিসিএ–র এক কর্তার কথায়, ‘ছাদ থেকে টেক–অফ করার পরে কাছাকাছি কোনও হাইরাইজ় থাকলে সমস্যা হবে।’ চার, কোনও এলিভেটেড হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার নামা–ওঠা করলে খুব উচ্চ–ক্ষমতাসম্পন্ন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হয়। হাসপাতালের দাবি, তাদের ফায়ার ফাইটিং টিমের সদস্যদের অনেককে হায়দরাবাদ থেকে এর জন্য প্রশিক্ষণ করিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়াও আর যা যা পরিকাঠামোর প্রয়োজন, তাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই পরিকাঠামো তৈরি করে যোগাযোগ করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের সঙ্গে। রাজ্য নিয়মিত যে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে, সেটি চাওয়া হলেও ওই ভিআইপি হেলিকপ্টার রাজ্য দিতে চায়নি বলেই নবান্ন সূত্রের খবর। এর মধ্যে গঙ্গাসাগর থেকে অসুস্থদের তুলে আনতে রাজ্য সরকার একটি দুই–ইঞ্জিন–বিশিষ্ট এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নেয়। ঠিক হয়, ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত গঙ্গাসাগরে পরিষেবা দেওয়ার পরে ১৭ তারিখ সকালে বেহালা থেকে উড়ে ডিশানের ছাদে গিয়ে নামবে ওই অগস্তা গ্র্যান্ড হেলিকপ্টারটি। এটি ভুবনেশ্বর থেকে এসেছে। ডিশানের ছাদ থেকে সেটি ফিরে যাবে সেখানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ডিশান হাসপাতালের এক কর্তা জানিয়েছেন, ছাদে হেলিপ্যাড বানানোর এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে চার বছর ধরে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘ত্রিপুরা–সহ উত্তর–পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, উত্তরবঙ্গ থেকে নিয়মিত রোগীরা আসেন। অনেক সময়ে ইমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে খুব কম সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই পরিকাঠামো থাকলে, যে কেউ চাইলে হেলিকপ্টার নিয়ে সরাসরি হাসপাতালের ছাদে এসে নামতে পারবেন। এখন হেলিকপ্টারে করে রোগীকে আনা হলে, হয় বিমানবন্দর, নয় বেহালা নয়তো আরসিটিসি–তে নামতে হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতাল পৌঁছতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। সেটা বাঁচানোর জন্যই এই প্রচেষ্টা।’