এই সময়: শেষ রাউন্ডে তীব্র প্রতিযোগিতা চলেছিল জাপানের মতো দেশের সঙ্গে। কিন্তু দক্ষতায় পিছিয়ে নেই ভারতও। গত চার দশকে এ দেশে, বিশেষত কলকাতারই ‘সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিজিসিআরআই)–এর পরিকাঠামো অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে।
মেটালিক, সেরামিক এবং পলিমার — তিন ধরনের কাচ নিয়ে গবেষণাতেই পর পর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে এই সংস্থা। সেই জোরে কঠিন হলেও টক্করে শেষ পর্যন্ত জাপানকে হারাতে পেরেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। এ দেশে ‘ইন্টারন্যাশনাল গ্লাস কংগ্রেস’–এর শেষ আসর বসেছিল দিল্লিতে, ১৯৮৬ সালে। চার দশক পরে ফের সে সম্মেলন হতে চলেছে ভারতে। এ বার আয়োজক শহর কলকাতা।
শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র থেকে একের পর এক গুলি সহজেই আটকে যায় বিশেষ ভাবে তৈরি মোটা কাচে। সাধারণ মানুষ একেই ‘বুলেটপ্রুফ কাচ’ হিসেবে চেনেন। বিশেষজ্ঞরা জানেন যে কাচটা কতখানি ভারী হয়। কলকাতার সিজিসিআরআই–এ স্পেশালিটি গ্লাস ডিভিশনের বিজ্ঞানীরা এমন এক কাচ তৈরি করেছেন, যা ‘প্রথাগত’ বুলেটপ্রুফ গ্লাসের তুলনায় অনেক পাতলা। তবে একই রকম বা আরও বেশি শক্তিশালী।
শুধু তা–ই নয়। কখনও প্রবল গরম, কখনও বা হিমাঙ্কের প্রায় ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম তাপমাত্রা থাকে মহাশূন্যে। তারই মধ্যে ছবি তোলা ও অন্য নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহের কাজ করে মহাকাশযান এবং কৃত্রিম উপগ্রহগুলি। পৃথিবী থেকে বহু লক্ষ মাইল দূরে থাকা যন্ত্রগুলির সাফল্য অনেকখানি নির্ভর করে তার ক্যামেরার লেন্স ও অন্য অপটিক্যাল মেশিনের উপর। ক’বছর আগেও এমন যন্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত বিশেষ কাচ আমদানি হতো জার্মানি থেকে। কিন্তু এখন কাচটা তৈরি হয় সিজিসিআরআই–এর গবেষণাগারে।
এমন নানা কারণে বিভিন্ন ধরনের কাচ তৈরি ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের স্থান যথেষ্ট আগের দিকে। বুধবার ‘ইন্টারন্যাশনাল গ্লাস কংগ্রেস ২০২৫’–এর কনফারেন্স প্রেসিডেন্ট সীতেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওই সম্মেলন চলবে বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে। আয়োজক দেশ ভারত ছাড়াও ২০টি দেশের ১৫০ জন যোগ দেবেন এতে। তাঁরা বাদেও আসবেন ৫৫০ জন প্রতিনিধি।’
ফেলে আসা সময়ের বৈঠকখানার আভিজাত্য পেরিয়ে কাচ এখন আর শুধুই বনেদিয়ানা বা শৌখিনতার সামগ্রী নয়। বরং তা দৈনন্দিন জীবনের অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। ইন্টারনেটের তথ্য যে ফাইবার অপটিক্সের মাধ্যমে দেওয়া–নেওয়া হয়, সেটিও বিশেষ এক রকম কাচ। সিজিসিআরআই–এর স্পেশালিটি গ্লাস ডিভিশনের সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিস্ট আতিয়ার রহমান মোল্লা বলেন, ‘বহু যুগ পেরিয়ে এখন আমরা ‘গ্লাস এজ’ বা কাচের যুগে রয়েছি, সে কথা বলাই যায়।’ ওই ইনস্টিটিউট প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘বিভিন্ন পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে যে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তা সংরক্ষণের জন্যও বিশেষ কাচ ব্যবহৃত হচ্ছে। সেটাও আমরা কলকাতার গবেষণাগারে তৈরি করেছি।’