• অবস্থা খারাপ জেনেও চলে দরাদরি, মেদিনীপুর মেডিক্যালে হেনস্থাও হতে মামনির পরিবারকে
    এই সময় | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মামনি রুইদাসের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় সাড়া রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে মা-হারা সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা মৃতার স্বামী ও পরিবার। সোমবারই ওই শিশুটি আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করাতে হয়। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই উঠে এল ওই হাসপাতালের আরও বিভিন্ন বেনিয়মের অভিযোগ। অভিযোগকারী মৃতার পরিবারই।

    তাদের অভিযোগ, মামনিকে ভর্তি করানোর সময় হাসপাতালের কর্মী ও আয়ারা তাদের উপর অন্যায় ভাবে জোরজুলুম করেন। এমনকী, দাবিমতো টাকা না দিলে মামনিকে অপারেশন থিয়েটারেও নিয়ে যাওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। বুধবার সে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামনির স্বামী দেবাশিস রুইদাস।

    এ দিন মা–হারা সদ্যোজাত সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে দেবাশিস জানান, প্রসূতির অবস্থা খারাপ জেনেও সন্তান প্রসবের পর ওটি থেকে ওপরে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভেতরে কর্মীরা (লিফটম্যান) ১২০০ টাকা চান। দরাদরি করে দেবাশিসের পরিবার ৪০০ টাকা দিলে সেই টাকা ছুড়ে ফেলে দেন কর্মীরা। তাঁরা দাবি করেন, ছ’জন আছেন। অন্তত ৬০০ টাকা লাগবে। পরে ৫০০ টাকা দিতে হয় লিফটে প্রসূতিকে ওপরে তোলার জন্য।

    এরপর বেডে দেওয়ার পর সেখানে দুই আয়া দাবি করেন, দেখাশোনার জন্য দু’জনকে ২০০০ টাকা দিতে হবে। মামনির স্বামী হাজার টাকা দিতে চাইলেও রাজি হননি তাঁরা। শেষে ১৮০০ টাকায় রফা হয়। ৫০০ টাকা অগ্রিম দেন। পরে বাকি টাকা দেওয়ার কথা হয়। তবে দেবাশিস জানান, সন্তানকে সোমবার অসুস্থ অবস্থায় ফের হাসপাতালে ভর্তি করলে সেই আয়ারা ৩০০ টাকা ফেরত দেন তাঁর হাতে।

    দেবাশিস আরও জানালেন, স্ত্রী মামনি মারা যাওয়ার অনেক পরে তাঁকে খবর দেওয়া হয়। দেবাশিস জানান, এ নিয়ে তিনি হাসপাতালের সুপার ও কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন গত শুক্রবার।

    স্ত্রীকে ভর্তি করানোর পর থেকে প্রতি মুহূর্তে দেবাশিসকে হেনস্থা হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। মাতৃমা থেকে ইমার্জেন্সি, বহুবার ভর্তির জন্য ছোটাছুটি করতে হয়েছে তাঁদের। ইমার্জেন্সি থেকে পাঠানো হয় মাতৃমায়, আবার মাতৃমা পাঠিয়ে দেয় ইমার্জেন্সিতে। বিকেল সাড়ে ৫টায় এলেও দীর্ঘ সময় কেটে যায় ভর্তি প্রক্রিয়ায়। প্রসূতি বিভাগে আয়াদের দৌরাত্ম্য। আয়া থেকে লিফটের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী সবাই দফায় দফায় টাকার দাবি করেন।

    দেবাশিস বলেন, ‘টাকা না দিলে কোনও পরিষেবা দেওয়া হবে না। টাকা না দিলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে না! এবং ওটি-তে ঢোকাবো না।’ ওই হাসপাতালে আর এক প্রসূতি রেখা সাউয়ের স্বামী সন্তোষ সাউও বলেন, ‘রোগী ওঠানো নামানোর জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছি। ফের আয়ারা ২০০ টাকা দাবি করেছিলেন। সেটা আর দেওয়া হয়নি।’

    মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি। রোগী ভর্তি করাতে এসে প্রতি মুহূর্তে ‘হেনস্থা’ হতে হয় রোগীর পরিবারের লোকজনকে। আয়া প্রসঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি জয়ন্তকুমার নন্দীকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দীকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিকের নাম, ‘কোন খবরের কাগজ থেকে বলছেন’ বলে জানতে চেয়ে ফোন কেটে দেন।

    এ দিকে, বুধবার মামনি রুইদাসের বাড়িতে গেলেন মেদিনীপুর সদর মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়। তখন বাড়িতে ছিলেন না মামনির স্বামী দেবাশিস রুইদাস। সোমবার সদ্যোজাত সন্তানটি আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাই হাসপাতালে ছিলেন দেবাশিস। এ দিন মহকুমাশাসক সারগা গ্রামে গিয়ে মামনির শাশুড়ি কল্পনা রুইদাস ও তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সঙ্গে ছিলেন গড়বেতা-৩ বিডিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য। মহকুমাশাসক বিডিও এবং পঞ্চায়েত প্রধানকে নির্দেশ দেন, যেন নিয়মিত এই পরিবার ও তাঁদের শিশুটির খাবার-সহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়মিত নজরদারি করতে বলেন।

  • Link to this news (এই সময়)