• ছকভাঙা পথে দিশা দেখাচ্ছেন হিতৈষী, প্রীতিরা
    এই সময় | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

    ‘আমি ব্লগার গো, ব্লগার।’ শিলিগুড়ির হিতৈষী জৈন মাকে যতবার এই কথাটা বলতেন, ততবারই ‘কী সব ছাইপাঁশ বলছিস’ বলে হেসে উড়িয়ে দিতেন মা। এখন অবশ্য মেয়ের আয় দেখে তিনি আর বলেন না, ‘ব্লগ খায়, নাকি মাথায় দেয়!’

    মাস কমিউনিকেশনে স্নাতক হওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফুড ব্লগ চালান হিতৈষী। এমনকী, শিলিগুড়ির চেকপোস্ট এলাকায় নিজে একটি কফি শপও তৈরি করেছেন সেই আয়ের টাকায়। শিলিগুড়ির আর এক মেয়ে প্রীতি সিংও ফুড ব্লগ চালান। পাশাপাশি, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্তোরাঁর খাবারের মান নিয়ে ব্লগ লেখেন তিনি।

    শিলিগুড়ির ঝঙ্কার মোড়ের বাসিন্দা সাহিল ও তাঁর ভাই শান কমেডি, সোশ্যাল মেসেজ এবং মোটিভেশন নিয়ে ভিডিয়ো তৈরি করেন। প্রণব তৈরি করেন আধুনিক প্রযুক্তির নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে ভিডিয়ো। নিজের বাইকে চেপে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো তরুণ বোমজান ভিডিয়ো তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন।

    ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, সরকারি চাকরি কিংবা ব্যবসা ছেড়ে শিলিগুড়ির তরুণ প্রজন্ম এক নতুন পেশায় নেমেছেন। তাঁরা নিজেদের কখনও ব্লগার, কখনও ভ্লগার বলে পরিচয় দেন। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় সাবস্ক্রাইবার বাড়লে আয়ের যে রাস্তা তৈরি হয় সেটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।

    হিতৈষী যেমন সাড়ে চার বছর আগে কলকাতায় মাস কমিউনিকেশন পড়ার সময়েই সহপাঠীদের কাছে ব্লগ লেখার ব্যাপারটা শিখে নেন। পড়াশোনা শেষ করে শিলিগুড়ি ফেরার পরে তিনি এই পেশায় নেমে পড়েন। সোশ্যাল মিডিয়ায় হিতৈষীর ফলোয়ার প্রায় ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আয়ের টাকায় নিজের কফি শপও তৈরি করে ফেলেছেন। হিতৈষীর বেশ মজাই লাগছে নতুন এই পেশায় আসতে পেরে। তাঁর কথায়, ‘আমার বাড়িতে, যেখানে থাকি সেখানকার লোকজন, আত্মীয়েরা তো প্রথমে বুঝতেই পারতেন না যে, আমার পেশা কী? ব্লগ করে কী হবে, সেটাই ছিল সকলের প্রশ্ন। এখন অবশ্য আর কোনও সমস্যা নেই। উল্টে প্রতিদিন ফলোয়ার বাড়ছে।’

    দু’বছর আগে বিকম পাশ প্রীতি সিং তাঁর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ বন্ধু প্রদীপ সাহানির সঙ্গে ফুড ব্লগ লিখছেন। সেই সঙ্গে যে সমস্ত রেস্তোরাঁ কিংবা হোটেল অনলাইনে প্রচার চায়, তাঁদের সাহায্য করছেন তাঁরা। প্রীতির কথায়, ‘এটাই তো আমার পেশা। ফলে টাকার ব্যাপারটা ভুলে গেলে চলবে কী করে?’ প্রীতির সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের সংখ্যা সোয়া লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

    শিলিগুড়ির ঝঙ্কার মোড় এলাকার বাসিন্দা সাহিল এবং তাঁর ভাই ২০১৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো আপলোড করা শুরু করেন। শুরুর দিকে সাহিল একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। ধীরে ধীরে ফলোয়ার বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে আয়ও। একটা সময়ে চাকরি ছেড়ে দেন। সাহিলদের ফলোয়ার পাঁচ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালেই সিলভার বাটন পেয়েছেন তিনি।

    শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকা মিলে শতাধিক ব্লগার রয়েছেন। ভিডিয়ো ব্লগ আপলোড করে সকলেই যে আয়ের রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন, এমন নয়। তবে বেশ কিছু তরুণ-তরুণীর এখন এটাই আয়ের রাস্তা। প্রীতি যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘এটাই আমার পেশা। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী দিনে এই পেশাটাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাব।’

  • Link to this news (এই সময়)