মেদিনীপুর মেডিক্যাল কাণ্ডে সিনিয়র-জুনিয়র ডাক্তার-সহ সাসপেন্ড ১২ জন, ঘোষণা মমতার
আজ তক | ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি ও শিশু মৃত্যুর ঘটনায় বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, দুটি তদন্ত রিপোর্টে এদের গাফিলতির থাকার কথা পাওয়া গিয়েছে। যে ১২ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে তিনজন সিনিয়র ডাক্তার। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁরা হলেন-মাতৃমা বিভাগে ইউনিট ১সি-র বেড ইনচার্জ দিলীপ পাল, সিনিয়র চিকিৎসক হিমাদ্রি নায়েক, আরএমও সৌমেন দাস, অ্যানাস্থেশিস্ট পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়, পিজিটি প্রথম বর্ষের চিকিৎসক মৌমিতা মণ্ডল, পূজা সাহা, ইন্টার্ন চিকিৎসক সুশান্ত মণ্ডল, পিজিটি তৃতীয় বর্ষের চিকিৎসক জাগৃতি ঘোষ, ভাগ্যশ্রী কুন্ডু, পিজিটি প্রথম বর্ষের অ্যানাস্থেশিস্ট মণীশ কুমার, বিভাগীয় প্রধান মহম্মদ আলাউদ্দিন, হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত। ।
এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে প্রসূতির পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। চাইলে পরিবাররে একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। গোটা ঘটনায় চিকিৎসকদেরই কাঠগড়া তুুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ডাক্তাররা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে এই ঘটত না। একটা মৃত্যু এড়ানো যেত।
গত বুধবার অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি রাতে সিজারিয়ান সেকশন হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচ প্রসূতি। এদের মধ্যে মারা যান মামনি রুইদাস। বাকি চারজনের মধ্যে তিনজনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের গ্রিন করিডর করে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন এই তিন প্রসূতি। বাকি একজন অর্থাৎ এই রেখা সাউ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এইচডিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন। এক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবারই রেখার কোল আলো করে এসেছিল শিশুটি। বেলদা সংলগ্ন খাকুড়দার বাসিন্দা রেখা। রেখার চিকিৎসা মেদিনীপুর মেডিক্যালেই চলছিল। হাসপাতালের এইচডিইউ বিভাগে তিনদিন চিকিৎসা চলার পরে এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন তিনি। তবে রেখা সুস্থ হয়ে উঠলেও গত ৮ জানুয়ারি জন্মানোর পর থেকেই ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁর সন্তানকে। বৃহস্পতিবার শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত-সহ অন্য আধিকারিকরা। মুখ্যসচিব প্রথমেই জানিয়ে দেন যে দুটি তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে। তাতে চিকিৎসায় গাফিলতির কথা বলা হয়েছে। সিআইডি আরও তদন্ত করছে। সিনিয়র চিকিৎসকরা তদন্ত করতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'জুনিয়র ডাক্তাররা অপারেশন করেছিলেন। সিনিয়র ডাক্তররা ছিলেন না। তাঁরা রোগীকেও দেখেননি। চিকিৎসায় গাফিলতি রয়েছে। আপারেশনের সময় আরএমও উপস্থিত ছিলেন না। অপারেশনের নিয়ম মানা হয়নি এসওপি ফলো করা হয়নি। সিনিয়র ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন না। ট্রেনি ডাক্তাররা অপারেশন করেছেন। সেই কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। সংক্রমণ রুখতে প্রয়োজনীয় পদ্ধতিও মানা হয়নি। দুটো রিপোর্ট পেয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
এরপরেই মমতা বলেন, 'যারা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব ঠিক করে পালন করলে এক মাকে ও সন্তানকে বাঁচানো যেত। এটা দুঃখজনক ঘটনা। আজকে সবকিছু থাকার পরেও দেখার দায়িত্ব কাদের। সিনিয়র ডাক্তারদের ৮ ঘণ্টা করে হাসপাতালে ডিউটি দেোওয়ার কথা। মানুষের জীবনের থেকে বড় তো কিছু নয়। সেবা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা মানুষের দরকার। রোগ কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সিজারিয়ান করেন সিনিয়র ডাক্তাররা। সাধারণ মানুষকে বলব এটা অন্যায় হয়েছে। যিনি স্ত্রী, সন্তান হারিয়েয়েছন, তাঁদের জন্য সান্ত্বনা যথেষ্ট নয়। ওই পরিবারগুলো গাল দিয়ে আমাদের শুনতে হবে। অনেক প্রাইভেট হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেওয়া হচ্ছে। আমাদের কমিশন আছে এটা দেখার। কোনও অভিযোগ থাকতে তা জানাতে পারেন। তা সত্ত্বেও কখনও কখনও ছুটির দিন থাকবে , তা বলে দায়িত্ব পালন করবেন না। এটা কি জাস্টিফাই করতে পারে? অপারেশন থিয়েটাররে গেটে সিসিটিভ লাগাতে দেওয়া হয় না। কেন হয় না? সিসিটিভ ওটি-র ভেতরেও থাকা উচিত বলে মনে করি। অবহেলার কেস, অপরাধের মামলা ভেরিফাই করা উচিত। সিস্টেম থাকা উচিত। অনেক সময় রোগীরাও চান না। তাঁরা চাইলে আমরা ভিডিও দেখাব না। কারা ওটিতে যাচ্ছে, কারা আসছে তা জানা দরকার।'