কথা রাখলেন হুগলির সাংসদ, ভাঙন কবলিত বলাগড় পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল...
আজকাল | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: নির্বাচনে দাঁড়িয়ে একটু সময় লেগেছিল বুঝতে। প্রত্যেকটা বিধানসভা ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। বলাগড় বিধানসভা এলাকায় পা রেখেই গঙ্গা ভাঙনের অভিযোগ পেয়েছিলেন। বিধানসভা এলাকায় ঘুরে বাস্তবে তিনি অনুভব করেছিলেন গোটা বলাগড় ব্লক ভাঙন কবলিত। ইতিমধ্যেই গঙ্গা গর্ভে বিলীন হয়েছে একাধিক গ্রাম গুপ্তিপাড়া, বলাগড়, জিরাট, ভবানীপুর, মিলনগড়, চরকৃষ্ণবাটি, খয়রামারি সহ বিস্তীর্ণ এলাকা গঙ্গার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ। একাধিক বাড়ি, চাষের জমি, স্কুল রাস্তা ঘাট জলে তলায় গেছে। বুঝেছিলেন, অবিলম্বে ভাঙন প্রতিরোধ করে না করা হলে আরও ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।
বলাগড়ের বাসিন্দাদের তরফে অভিযোগ উঠেছিল আগের সাংসদও ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই ২০১৯ সালে জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে গত পাঁচ বছর তিনি কিছুই করেননি। তখন তৃণমূল প্রার্থী রচনা ব্যানার্জি বলাগড়বাসীকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে অবশ্যই সংসদে ভাঙনের প্রসঙ্গ তুলবেন। ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করবেন। তবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজন বিপুল অর্থের। তাই কেন্দ্র সরকারের সক্রিয়তা প্রয়োজন। গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ করা একা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব হবে না।
ভোটে জেতার পর তিনি কথা রেখেছেন। সম্প্রতি বলাগড়ে গঙ্গা ভাঙনের প্রসঙ্গ সংসদে তুলেছিলেন হুগলির সাংসদ রচনা ব্যানার্জি। সংসদে তিনি বলেছিলেন, গঙ্গা ভাঙন শুধু বলাগড় ব্লকের সমস্যা নয়। এই সমস্যা গোটা হুগলি জেলার একটা বড় সমস্যা। তারপরেই বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল গঙ্গা ভাঙন পরিদর্শনে বলাগড় ব্লকের অন্তর্গত গুপ্তিপাড়ায় আসেন। বিস্তীর্ণ এলাকার গঙ্গা ভাঙন পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। এদিন পরিদর্শনকারী দল গুপ্তিপাড়া পৌঁছে ফেরিঘাট লাগোয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন, পাটনা থেকে আসা গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর রঞ্জিত কুমার, এ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর দীপক কুমার এবং রোশন কুমার। ছিলেন হুগলির সাংসদ রচনা ব্যানার্জি, রাজ্য সেচ দপ্তরের আধিকারিক সোমনাথ দে, সদর মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা, বিডিও বলাগড় সুপর্না বিশ্বাস, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে লঞ্চে ঘুরে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সাংসদ। পরিদর্শন শেষে রঞ্জিত কুমার বলেছেন, তাঁরা গঙ্গার ভাঙ্গন দেখতে এসেছেন। সম্প্রতি হুগলির সাংসদ বিষয়টা সংসদে বলেছিলেন। একইসঙ্গে তাঁদের দপ্তরে চিঠিও দিয়েছিলেন সাংসদ। তাই জিএফসিসির চেয়ারম্যান তাঁদের পাঠিয়েছেন। ভাঙন দেখার পাশাপাশি এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। তার পর ভাঙন সম্পর্কিত বিষয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করা হবে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য সেচ দপ্তরের আধিকারিক সোমনাথ বাবু জানিয়েছেন, সাংসদ সংসদে ভাঙনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। তার পর কেন্দ্র সরকার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে তিন সদস্যের টিম পাঠায়।
সেন্ট্রাল রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর দু' জন ডাইরেক্টরও পরিদর্শনে এসেছেন। কেন্দ্রের জিএফসিসির টিম তাঁদের মতামত দেবেন। তারপর যৌথভাবে স্কিম তৈরি করে দ্রুততার সঙ্গে সমস্যা সমাধানের কাজ শুরু করা হবে। এই প্রসঙ্গে সাংসদ রচনা ব্যানার্জি বলেছেন, তাঁর আবেদনে কেন্দ্র সরকার সারা দিয়েছেন। টিম পাঠিয়েছেন। তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। সন্ধে পর্যন্ত থাকছেন। এটাই একটা বড় পাওয়া। তিনি চেষ্টা করেছেন। যতদিন আছেন হুগলিবাসীর জন্য চেষ্টা করবেন।