মেঠো পথে ব্যাঘ্র দর্শন! মৃত তিন গবাদি পশু, শিকার শুরু করল জিনাতের ‘প্রেমিক’
প্রতিদিন | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, বান্দোয়ান (পুরুলিয়া): ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলায় এসে চারদিন ধরে লুকোচুরি, শেষমেশ দেখা দিল জিনাতের প্রেমিক! শুরু করল শিকারও। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লক সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে কেন্দাপাড়া গ্রামের কাছে ভাঁড়ারি সিমসত পাহাড়-জঙ্গলে পরপর খুবলে খাওয়া তিনটি গবাদি পশুর মৃতদেহ মেলে। এই এলাকাতেই অস্থায়ী ডেরা বেঁধেছিল জিনাত। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকার এক বাসিন্দা জঙ্গলে গরু নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর চোখে পড়ে মৃতদেহগুলি। তারপরই সেখানে বনদপ্তর ও সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা যান। ওই তিনটি গবাদি পশুর বাঘের হামলাতেই মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।
একদিকে সাক্ষাৎ রয়্যাল বেঙ্গল দর্শন। সেইসঙ্গে তার শিকারের ছবি। সবমিলিয়ে একেবারে ভয়ে সিঁটিয়ে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়, ভাঁড়ারি পাহাড়তলি-সহ সদর বান্দোয়ানের একাংশও। বৃহস্পতিবার সাতসকালে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের যমুনাগোড়ার বাসিন্দা বাবুশ্বর হেমব্রম ওই রয়্যাল বেঙ্গলটিকে নিজের চোখে দেখতে পান। টমেটো জমি থেকে তা সংগ্রহ করার সময় ওই রয়্যাল বেঙ্গল দর্শন হয়। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, “যে যুবক বাঘটিকে দেখেছেন তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাকে আমরা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবিও দেখিয়েছি। তিনি যা বাঘের আকৃতি বলেছেন তা সব মিলে গিয়েছে। ওই এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপও দেখা যায়। তবে কিলিংটা বাঘের কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এদিন এই বিস্তীর্ণ এলাকায় পায়ের ছাপ ও কিলিং থেকে কেন্দাপাড়া লাগোয়া ভাঁড়ারি, যমুনাগোড়া ও রাইকা পাহাড় সংলগ্ন কেশরাতে নতুন করে খানিকটা পচে যাওয়া ছাগলের মাংস দিয়ে সবুজ খাঁচা পাতা হয়েছে। যদি ওই মাংসের ঘ্রাণে সে আসে, সেই অপেক্ষায় বনবিভাগ। বুধবার সারাদিন, এমনকি রাতেও ওই শার্দুলের কোনও পদচিহ্ন মেলেনি। তবুও ওই বাঘের পদচারণা এবং জিনাতের ফেলে যাওয়া পথের কথা মাথায় রেখে মানবাজার ২ বনাঞ্চলের বড়গোড়ায় শূকরের মাংস দেওয়া হয়। কিন্তু সে আসেনি। ফলে প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও বাঘ-বন্দি অভিযান ব্যর্থ হয়।
তৃতীয় দিনের অভিযান শুরু হয়ে যায় দুপুর থেকেই। কেন্দাপাড়ার কাছে ভাঁড়ারি সিমসত এলাকায় যেখানে কিলিং পড়ে থাকে, তার কিছুটা দূরেই লতাপাতা জড়িয়ে ওই খাঁচা পাতা হয়। বাঘের দর্শন পাওয়া যমুনাগোড়ার বাবুশ্বর হেমব্রম বলেন, “আমি একেবারে সকালের দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিলাম। সেই সময় একটি টমেটো জমি থেকে সংগ্রহ করছিলাম। দেখি, কিছুটা দূরে মাটির রাস্তায় জঙ্গলের দিকে হেঁটে যাচ্ছে বাঘ। ওই জন্তুটি আমাকে দেখেনি। কিন্তু আমি ওখানে আর একটুও দাঁড়াইনি। গ্রামে এসে মানুষজনকে জানাই। তারপর বনদপ্তরকে খবর দেওয়া হয়।”
এরপর বনকর্মীরা তাঁর কাছে এসে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি দেখালে তাতেই সিলমোহর দেন ওই যুবক। বনদপ্তর ওই এলাকায় গিয়ে দেখে বাঘের প্রচুর পায়ের ছাপ। ওই এলাকায় একটি পুকুরে জলও খায়। যার পদচিহ্ন মেলে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) সিঙ্গরম কুলানডাইভেলের কথায়, “প্রায় ২৫০ মিটার দূর থেকে যমুনাগোড়ার ওই যুবক বাঘ দেখতে পান। আমরা তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। ওই বাঘটি একটি পুকুরে জল খায়। ওই এলাকাতেই বাঘটি রয়েছে।”