জিনাতকে কাছে পেতেই ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গলে বাঘ, নিখোঁজ বহু গোরু-ছাগল
বর্তমান | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: সঙ্গমের তীব্র বাসনায় শুরু হয়েছিল তার অভিসার। কিন্তু, যার টানে এতদূর আসা, তার খোঁজ মেলেনি এখনও। জিনাতকে খুঁজে পেতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গলের ‘নতুন অতিথি’। জিনাতের পুরাতন ‘ডেরা’ রাইকার জঙ্গল সে তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার তিনটি গোরুর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায়।
গত রবিবার বান্দোয়ানের ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের কাছে যমুনাগোড়া এলাকায় নরম মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ মেলে। তার পরের দু’দিনও ভাঁড়ারিয়ার আশেপাশের তিন চার কিলোমিটারের মধ্যেই বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছিল। বুধবার বাঘের পায়ের কোনও ছাপ পাওয়া যায়নি। তার জেরে প্রবল টেনশন শুরু হয়েছিল বনকর্তাদের। বুধবার দিনভর বাঘের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘোরেন বনকর্তারা। কার্যত গোরু খোঁজা খুঁজেও সন্ধান মেলেনি বাঘের। বনদপ্তরের কর্তারা মনে করছিলেন, সে হয় ভূরিভোজ সেরে ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গলের কোনও গুহায় শীতঘুমে গিয়েছে, অথবা পাহাড়ী পথ ধরেই ঝাড়খণ্ডের দিকে রওনা দিয়েছে। সমস্ত জল্পনার উত্তর মিলল বৃহস্পতিবার।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার যমুনাগোড়ার এক বাসিন্দা দাবি করেন, তিনি জঙ্গলে বাঘ দেখেছেন। তাঁকে জেরা করেন বনদপ্তরের কর্মীরা। কিন্তু বাঘের রূপের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, তাতে অসঙ্গতি ঠেকছে বনকর্তাদের। তবে, জঙ্গলের যে এলাকায় ওই ব্যক্তি বাঘ দেখেছেন বলে দাবি করছিলেন, সেইসব এলাকায় কিন্তু বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। জঙ্গলের শুঁড়িপথে ধুলোমাটির উপর বাঘ শুয়ে ছিল, এমন প্রমাণও মিলেছে। এরপরেই বাঘের খোঁজ পেতে সবরকম প্রযুক্তির সাহায্য নিতে শুরু করেন বনদপ্তরের কর্তারা। আকাশে ওড়ানো হয় ড্রোন। কিন্তু, বাঘের দেখা মেলেনি।
কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, ‘বুধবার দিনভর বাঘের দেখা পাওয়া যায়নি। বাঘটি সম্ভবত জঙ্গলেই ঘাপটি মেরে ছিল। বুধবার রাতে টহল দিয়ে জল খেয়ে ফের জঙ্গলে ঢুকেছে।’
তবে বাঘ ধরতে চেষ্টার কসুর করছেন না বনদপ্তরের কর্তারা। পাতা হচ্ছে খাঁচা। খাঁচায় ছাগল দেওয়া হলেও সেই টোপ গেলেনি বাঘ। জঙ্গলে দেওয়া হয়েছে কাঁচা মাংসও। বসানো হয়েছে ট্র্যাপ ক্যামেরাও। কিন্তু, তাতে দেখা মেলেনি বাঘের। তবে রাইকা, ভাঁড়ারিয়ার আশেপাশের জঙ্গল এলাকার বহু মৃত ছাগল উদ্ধার হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। বহু ছাগল নিখোঁজ রয়েছে এখনও। বুধবার জঙ্গল থেকে দু’টি ক্ষতবিক্ষত কুকুরও উদ্ধার হয়। তারমধ্যে একটি মৃত। বৃহস্পতিবার বাড়ুডির জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় তিনটি গোরু। তারমধ্যে একটি আধখাওয়া। বাকিগুলির নাড়িভুঁড়ি, হাড়গোড়, চামড়া পাওয়া গিয়েছে।
গোরুগুলি কেন্দাপাড়ার বাসিন্দা নির্মল পরামানিকের। নির্মলবাবু বলেন, সোমবার পাঁচটি গোরু নিয়ে জঙ্গলে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যার সময় দু’টি গোরু ছুটতে ছুটতে জঙ্গল থেকে ফিরে এলেও বাকি তিনটে ফেরেনি। বনদপ্তরে ব্যাপারটা জানালে তারা সাফ জানিয়ে দেয়, মৃত গোরুর দেহ না নিয়ে এলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। নির্মলবাবু আরও বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকি। তখনই হারিয়ে যাওয়া তিনটি গোরুর দেহাংশ দেখতে পাই। গোরুগুলির দেহাংশের নমুনা পরীক্ষা করেছেন বনকর্মীরা। তাঁদের দাবি, এই কাজ বাঘের নয়। নেকড়ে জাতীয় পশু দলবেঁধে এই কাজ করেছে। যদিও পাল্টা নির্মলবাবুর প্রশ্ন, এতবছর ধরে জঙ্গলে গবাদি পশু চরাচ্ছি, নেকড়ে জ্যান্ত গোরু শিকার করে খেয়েছে এমন ঘটনা জীবনেও দেখিনি।