নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: গত বছর প্রকৃতি বিমুখ থাকায় আলুর ফলন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। বিঘায় ৩০-৪০ বস্তা আলুর ফলন হয়। এবার প্রতি বিঘায় ৭০-৮০ বস্তা আলু পাওয়ার আশা রয়েছে। তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চাষিরা। এরকম ফলন হতে থাকলে আদৌ দাম পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তাঁরা চিন্তায় রয়েছেন। চাষিরা বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য জ্যোতি আলু ওঠার সময় থেকেই সরকারের তা কেনা উচিত। তা না হলে চাষিরা দাম পাবেন না।
এবছর প্রকৃতি সহায় ছিল। বীজ রোপণের পর ভারী বৃষ্টি হয়নি। ঠান্ডাও ভালোই ছিল। অন্যান্য বছরের মতো কুয়াশার সেই দাপট দেখা যায়নি। তার ফলে আলু গাছ ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যেই জলদি জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। জ্যোতি আলুও উঠতে আর বেশিদিন বাকি নেই। নাবি ধসার মতো রোগ দেখা না দিলে তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক আশিস চক্রবর্তী বলেন, ১২জানুয়ারি থেকে ২৬জানুয়ারির মধ্যে নবি ধসার আশঙ্কা থাকে। জমিতে ম্যানকোজেব বা ক্লোরোথ্যালোনিল ২-২.৫গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে। নাবি ধসা দেখা দিলে অন্তর্বাহী ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। চাষিরা বলেন, বড়সড় অঘটন না হলে বেশিরভাগ জমিতেই এবার ‘বাম্পার’ ফলন হবে। মশাগ্রামের চাষি নির্মল ঘোষাল বলেন, বিঘায় গড়ে ৮০বস্তা করে আলুর ফলন হচ্ছে। গতবছর এর অর্ধেকও হয়নি। এখন সবে আলু উঠতে শুরু করেছে। তাই দাম পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এরকম ফলন হলে আলুর দাম কমে যাবে। সরকারের এখন থেকেই ভাবনাচিন্তা করা উচিত। আর এক চাষি সুকুর শেখ বলেন, এবছর লাভ না পাওয়া গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। গত বছর চাষিরা লাভ পাননি। ব্যবসায়ীরা হিমঘরে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আলু রেখে ফায়দা তুলেছেন। ‘বাম্পার ফলন’ হলে সরকারকে আলু কিনতেই হবে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের মেন্টর মহম্মদ ইসমাইল বলেন, সরকার সবসময় চাষিদের পাশে থাকে। আগেও আলু কেনা হয়েছে। এবারও সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার পাশে থাকবে। জেলা পষিদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল বলেন, আলুর ফলন ভালো হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চাষিরা বলেন, ভালো ফলনের সম্ভাবনা থাকায় এবার অনেক চাষি বিমা করতেও আগ্রহী নয়। গতবছর বিমা করার জন্য চাষিদের লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছিল। এবছর বিমার জন্য টাকা লাগছে না। তারপরও তাঁরা ততটা উৎসাহী নয়। ভালো ফলন হলে বিমার দরকার হবে না। এমনটা তাঁরা ধরে নিয়েছেন।