• প্রসূতি মৃত্যু কাণ্ডে সাসপেন্ড সুপার সহ ১২ চিকিৎসক
    বর্তমান | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্যালাইন বিতর্ক এবং প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার হাসপাতালের সুপার সহ ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করল নবান্ন। বৃহস্পতিবার একথা নিজেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় ১৩ সদস্যের কমিটির পাশাপাশি সিআইডি তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আর এই তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এদিন খোলসা করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই রেশ ধরেই ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ‘যাঁদের কাছে মানুষের ভাগ্য বাঁধা থাকে, যাঁদের হাতে সন্তানের জন্ম হয়, তাঁরা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতেন, এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না।’


    প্রোটোকল ভেঙে দু’টি টেবলে একসঙ্গে অপারেশন, আরএম‌ও এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, একই সময়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মতো একাধিক অনিয়মের খতিয়ান তুলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সুপার ডাঃ জয়ন্ত কুমার রাউত, দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ দিলীপ কুমার পাল ও ডাঃ হিমাদ্রী নায়েক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডাঃ মহম্মদ আলাউদ্দিন, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় ও ছ’জন পিজিটি ডাঃ মৌমিতা মণ্ডল, ডাঃ ভাগ্যশ্রী কুণ্ডু, ডাঃ  সুশান্ত মণ্ডল, ডাঃ পূজা সাহা, ডাঃ মণীষ কুমার ও ডাঃ জাগৃতি ঘোষকে সাসপেন্ড করা হল বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাঃ ইন্দ্রনীল সেনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের নতুন সুপার এবং ডাঃ দেবদত্তা ঘোষকে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। সাসপেনশনের এই সিদ্ধান্তের পরই মেদিনীপুর মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তাররা অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। 


    অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) সিসি ক্যামেরা না থাকায় ভিতরের ফুটেজ পাওয়া যায়নি। এই ইস্যুতেও এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। তাঁর দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই ওটি’র বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগাতে দেওয়া হয় না। এবার তা রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে বলবৎ করতেই হবে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ বাধা দেয়, তাঁদের হাত জোড় করে বলবেন যে, এখানে আর আপনাদের প্রয়োজন নেই। অন্য কোথাও প্র্যাকটিস করতে পারেন।’


    রাজ্যে বিশ্বমানের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও পরিষেবার অবনতির কারণ হিসেবে ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ সংস্থার সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। একইসঙ্গে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের আট ঘণ্টা ডিউটি, অপারেশন ও রাউন্ডের সময় তাঁদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। ডাক্তারদের উদ্দেশে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি মৃতের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ও তাঁরা চাইলে চাকরির ঘোষণাও করেছেন তিনি।


    এদিনই অবশ্য মৃত ও অসুস্থদের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এছাড়াও এই ঘটনায় রাজ্য ও কেন্দ্রকে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ৩০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের মন্তব্য, ‘এই স্যালাইন ব্যবহার বন্ধ করতে ১০ দিনেরও বেশি সময় কেন লাগল, সেটাই আশ্চর্যের।’
  • Link to this news (বর্তমান)