• বকখালিতে ধৃত প্রোমোটার, লিফটার এজেন্সির নিয়ম কড়া করছে পুরসভা
    এই সময় | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, কলকাতা ও বকখালি: বাঘাযতীনের বিদ্যাসাগর কলোনিতে বাড়ি হেলে পড়ার তিন দিন পরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগ‍নার বকখালিতে ধরা পড়লেন ওই বাড়ির প্রোমোটার–ডেভলপার সুভাষ রায়। বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ তাঁকে বকখালির একটি রিসর্ট থেকে গ্রেপ্তার করে ফেজারগঞ্জ থানার পুলিশ। বাঘাযতীনের বাসিন্দারা জানান, বাড়িটি হেলে পড়ার দিন সকালেও তাঁকে নিজের দোকানে দেখা গিয়েছিল।

    হেলে পড়া বাড়ি সোজা করার কাজ দেখতে বিদ্যাসাগর কলোনিতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু বিকেল থেকে বেপাত্তা হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর খোঁজ শুরু করে পুলিশ। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। তবে বৃহস্পতিবার বেলার দিকে সেই মোবাইল ট্র্যাক করেই অভিযুক্তের লোকেশন জানতে পারে কলকাতা পুলিশ। সুন্দরবন পুলিশ জেলার ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানাকে বিষয়টি জানানো হয়। রিসর্টে হানা দেয় ফ্রেজারগঞ্জ থানার পুলিশের টিম। খবর পেয়ে বিকেলেই তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসতে রওনা দেয় নেতাজিনগর থানার পুলিশ। আজ, শুক্রবার তাঁকে আলিপুর আদালতে হাজির করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।

    এ দিন দুপুরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিদ্যাসাগর কলোনিতে গেলে তাঁর কাছে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানতে চান, কবে ধরা পড়বেন সুভাষ? তখনও তাঁর ধরা পড়ার বিষয়টি সামনে আসেনি। মেয়র এলাকাবাসীকে বলেন, ‘পালিয়ে কোথায় যাবেন? ভ্যানিশ তো হতে পারবেন না। পুলিশ খুঁজছে। অবশ্যই ধরা পড়বেন।’ মেয়র সে সময়েই জানান, হেলে পড়া বাড়ি সোজা করার জন্যে ডেভলপাররা আর যেমন–তেমন লিফটার এজেন্সি নিয়োগ করতে পারবেন না। এজেন্সি নিয়োগে কড়া নিয়ম আনতে চলেছে পুরসভা। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো লিফটার এজেন্সি গজিয়ে উঠেছে। কম খরচের কথা ভাবে তাদের দিয়ে কাজ করানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকেই।

    বিদ্যাসাগর কলোনিতে যে লিফটার এজেন্সি হেলে পড়া বাড়ি সোজা করার কাজ করছিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাড়ির জগ ব্যবহার করে বাড়ি সোজা করছিল তারা। বিশেষজ্ঞরা পুরসভাকে জানিয়েছেন, ওই ছোট জগ কাদামাটিতে বসে যায়। ভারসাম্য নষ্ট হয়ে আরও হেলে পড়ে বিদ্যাসাগর কলোনির চারতলা বাড়িটি। মেয়র এটা জেনে লিফটার সংস্থার ভূমিকাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার তিনি পুরকমিশনার ধবল জৈনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ‘এটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফল্টের জন্যে হয়েছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখব।’

    পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার থেকে কোনও হেলে পড়া বাড়ি সোজা করতে কোন লিফটার এজেন্সিকে প্রোমোটার বা ডেভলপার দায়িত্ব দিচ্ছেন— তাদের নাম, ঠিকানা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগকে জানাতে হবে। আধিকারিকরা খতিয়ে দেখবেন — ওই সংস্থার অভিজ্ঞতা কেমন, কতটা সাফল্যের সঙ্গে তারা কাজ করেছে, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে কিনা, লাইসেন্স রয়েছে কিনা। তার পরেই পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ অনুমতি দেবে।

    হরিয়ানার যে সংস্থাটি বিদ্যাসাগর কলোনির হেলে পড়া বাড়ি সোজা করার কাজ করছিল, তারা ওই কাজের জন্যে কোনও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার ফ্ল্যাট–ওনার্সরা। তাঁরা জানান, সংস্থার লোকেদের ডেভলপারই নিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা যখন জিজ্ঞাসা করেন, কে ইঞ্জিনিয়ার—তখন যাঁরা কাজে এসেছিলেন— সবাই দাবি করেন ইঞ্জিনিয়ার। মেয়র বলেন, ‘হরিয়ানার সংস্থা দায় এড়াতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, বাড়ি–বিপর্যয়ের এই ঘটনায় প্রোমোটার সুভাষ রায়, ফ্ল্যাটের ৮ জন মালিক এবং হরিয়ানার লিফটার এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে নেতাজিনগর থানায়। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১০ সালে বহুতলটি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তা শেষ করতে বছর তিনেক লেগেছিল। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল কিনা, বিল্ডিং প্ল্যান কে পাস করেছিলেন— সব খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

  • Link to this news (এই সময়)