এই সময়: ১৯৪৭–এর ১৫ অগস্ট নয়, ২০২৪–এর ২২ জানুয়ারিকেই দেশের ‘প্রকৃত’ স্বাধীনতা দিবস বলে সম্প্রতি উল্লেখ করেছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। কারণ, গত বছর ওইদিন–ই অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়েছিল। ‘স্বাধীনতা দিবস’ নিয়ে ভাগবতের মনোভাব প্রকাশ্যে আসতেই জোর বিতর্ক বাঁধে।
এ বার ভাগবতকে কড়া জবাব দিয়ে সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে ভাগবতের ওই মন্তব্যকে ‘দেশবিরোধী’ বলে তোপ দাগলেন তিনি। গত মঙ্গলবার ভাগবত স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে কী প্রতিক্রিয়া আসে, সে দিকে নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। ভাগবতের মন্তব্যের পরে দু’দিন কাটতে না কাটতেই মমতা বুঝিয়ে দিলেন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্য নিয়ে কোনও বিকৃত তথ্য তিনি বরদাস্ত করবেন না।
এ দিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭–এর ১৫ অগস্ট। উনি এই মন্তব্যটা জেনে করেছেন, নাকি না জেনে করেছেন, তা আমি জানি না। তবে এই মন্তব্যকে আমি দেশবিরোধী বলে মনে করি। কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠন কি দেশের স্বাধীনতা দিবস বদলে দিতে পারে? এটা হয় না।’ এই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতার সংযোজন, ‘স্বাধীনতার ইতিহাস এ ভাবে ভুলিয়ে দেওয়া যায় না। এই মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আমার ধারণাই ছিল না এরকম কথা কেউ বলতে পারেন!’
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ‘গুলিয়ে’ দেওয়ার অভিযোগ বারবার উঠেছে সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ইতিহাস–বিকৃত করার অভিযোগ তুলে মিটিং–মিছিলও করেছে তৃণমূল–সহ বিরোধী দলগুলি। এ দিন সে কথা ফের একবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে ইতিহাসের অনেক অধ্যায় বিকৃত করা হয়েছে। এ সব মানা যায় না। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসও পাল্টে দেওয়া হবে! এ সব খুব ডেঞ্জারাস। ভারতের নাম ভুলিয়ে দেবে দেখছি। আমাদের স্বাধীনতা আমাদের গর্ব। আমাদের প্রজাতন্ত্র আমাদের গর্ব। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের গর্ব।’ এ দিন ভাগবতের বিতর্কিত মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন মমতা।
ঘটনাচক্রে, আগামী মাসের গোড়াতে বাংলায় আসছেন মোহন ভাগবত। টানা দশদিন তিনি এ রাজ্যে থাকবেন। বর্ধমান শহরে প্রকাশ্য জনসভা করারও কথা তাঁর। আরএসএসের প্রধান হওয়ার পরে টানা এতদিন ভাগবতকে কখনও এ রাজ্যে থাকতে দেখা যায়নি। ফলে তাঁর এ বারের বঙ্গ–সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের। সেই আবহে তৃণমূল সুপ্রিমো এ দিন যেভাবে আরএসএস প্রধানকে বিঁধলেন তাতে ভাগবতের বঙ্গ–সফরের ‘গুরুত্ব’ আরও কিছুটা বেড়ে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরএসএসের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের জবাব এখনও দেওয়া হয়নি। তবে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা একেবারেই অবাক হচ্ছি না। তৃণমূলনেত্রীর কাছে আরএসএস দেশদ্রোহী হবে আর জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম দেশপ্রেমিক হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আসলে উনি ভাগবতের বক্তব্যের গভীরতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেননি। তৃণমূলের একটাই লক্ষ্য সংখ্যালঘু ভোট–ব্যাঙ্ক।’