দেবাশিস দাস
বাড়ি ভাঙলে বা হেললেই পুরসভা থেকে ডাক পড়ে তাঁর। অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও, ভাঙার কাজে ৩৪ বছর ধরে কলকাতা পুরসভার বড় ভরসা, সাতান্ন–র বিজয় সাউ। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘লোকে সাধারণত গড়ার কারিগর হন। বিজয় — পুরসভার ভাঙার কারিগর।’
পুরসভার অন্দরের খবর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়ারাও বিজয়ের কাছে আসেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনতে। বাঘাযতীনে হেলে–পড়া চারতলা আবাসনটিও ভাঙার কাজ চলছে বিজয়ের তদারকিতেই। নিরাপদে, ভারসাম্য বজায় রেখে, একটি বিপজ্জনক বহুতলকে ভাঙতে–ভাঙতে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ায় পারদর্শী বিজয়। ইঞ্জিনিয়াররা জানাচ্ছেন, সুন্দর ভাবে আধভাঙা, হেলে–পড়া বা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির অবশিষ্টাংশ ধীরে ধীরে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিজয়ের জুড়ি আজও খুঁজে পায়নি কলকাতা পুরসভা।
উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা বিজয়ের কথায়, ‘১৯৮৯–এ শুরু করেছিলাম। প্রথম কাজ ছিল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নন্দরাম মার্কেট।’ ছোটখাট, মোটাসোটা চেহারার বিজয় জানান, শিবালিক অ্যাপার্টমেন্ট, ফিরপো মার্কেট, বাগরি মার্কেট নিয়ে তিনি অন্তত ২৫টি বড় বাড়ি বা মার্কেট ভাঙার কাজ করেছেন। আর ছোটোখাটো কাজের তালিকা ধরলে সংখ্যাটা ৫০ পেরিয়ে যাবে। পুরসভা সূ্ত্রে খবর, সব জায়গায় বিজয় কাজ না–করলেও, তাঁর ডাক পড়ে। বিজয়ের বদলে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাও এক বার ওঁর পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
ইঞ্জিনিয়ারদের কথায়, শুধু ভাঙাই নয়, সঙ্কীর্ণ সরু গলিতে ক্রেন, আর্থ–মুভার ঢুকিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ নিরাপদে গলি থেকে বের করে আনার বিষয়েও রীতিমতো সিদ্ধহস্ত বিজয়। তাঁর কথায়,‘অল্প বয়সে পড়াশুনো ছেড়ে দিয়ে এই কাজ শুরু করেছিলাম। প্রথম দিকে বছরে এক–দু’বার ডাক পেতাম। আর এখন বিপদের কথা শুনলেই স্যররা আমায় ডাকেন।’