বাসুদেব ভট্টাচার্য
শীতের রাত। ঘন কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় দু’হাত দূরেও কিছু দেখা যায় না। কুয়াশার আড়ালে কী ভাবে সীমান্ত টপকানো হচ্ছে, তা বুঝতে বেগ পেতে হয় বিএসএফ-কে। দৃষ্টিতে যখন বাধা, সেখানে কানের উপর ভরসা করেছে বিএসএফ। কাঁটাতার টপকালেই ভেসে আসবে আওয়াজ, আর তা শুনেই সতর্ক হবে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী। এর জন্য কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের তিন বিঘা এলাকার একাংশের কাঁটাতারে কাচের বোতল বেঁধে রেখেছে বিএসএফ।
কাচের বোতল যখন অ্যালার্ম:
কোচবিহারের তিন বিঘা এলাকায় ভারতের দিকের শেষে রয়েছে আন্দারান খড়খড়িয়া গ্রাম। তার উল্টোদিকেই বাংলাদেশের আংড়াপোতা দহগ্রাম। এর মাঝে এতদিন উন্মুক্ত সীমান্ত ছিল। অর্থাৎ, কোনও কাঁটাতার বা বেড়া ছিল না। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ওই এলাকায় কাঁটাতার দেওয়ার দাবি করেছিলেন গ্রামবাসীরা। ১০ জানুয়ারি, ভারতের দিকে থাকা গ্রামের বাসিন্দারা জিরো পয়েন্ট ঘেঁষে লোহার খুঁটি পুঁতে তার মধ্যে কাঁটাতার লাগিয়ে বেড়া দেন। সেই সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ হয়। বাংলাদেশের বাসিন্দারাও বেড়া দিতে আপত্তি জানিয়ে ঝামেলা করেন।
এই পরিস্থিতিতে দু' দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সেক্টর আধিকারিকরা বৈঠক করে ওই এলাকায় বেড়া দেওয়ার কাজ বন্ধ রেখেছেন। যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আপাতত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এই বেড়া লাগানো হয়েছে এবং আরও প্রায় ৩ কিমি সীমান্ত খোলা রয়েছে। যতখানি এলাকায় অস্থায়ী বেড়া লাগানো হয়েছে, সেখানেই সুরক্ষা আরও আটোসাঁটো করল বিএসএফ। বেড়ার গায়ে কাচের বোতল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিএসএফের তরফ থেকে আন্দারান খড়খড়িয়া গ্রামে প্রথমবার বোতল লাগানো হয়। বিএসএফ সূত্রের খবর, কোথাও কাচের বোতল কোথাও আবার টিনের কৌটো জাতীয় জিনিসও ব্যবহার করা হয়৷ স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ রায় জানান, এই ব্যবস্থায় তাঁরা আরও বেশি সুরক্ষিত হলেন বলে মনে করছেন। কেউ বেড়া টপকানোর চেষ্টা করলে বা বেড়া কাটলে বোতলের শব্দ ভেসে আসবে। গ্রামের আরও এক বাসিন্দা রবীন্দ্র বর্মনের দাবি, এত দিন তাঁদের ফসল, গবাদি পশু চুরি হতো। এ বার কিছুটা হলেও সুরক্ষা বাড়ল।
বারবার অভিযোগ ওঠে, রাতের অন্ধকারে শীতের কুয়াশাকে ঢাল করে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা ভারতে ঢুকে অপরাধ করে। কখনও গবাদি পশু চুরি, কখনও ফসল কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই সমস্যা রুখতেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার লাগানোর দাবি করে আসছেন ভারতের দিকের বাসিন্দাদের অনেকে।