• দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু দিদিমা–নাতির, মর্মান্তিক ঘটনা বাঁকুড়ার
    এই সময় | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, বাঁকুড়া: বাকি ছিল আর কয়েকমাসের অপেক্ষা। এক চিলতে মাটির ঘরে আর দিন কাটাতে হতো না কষ্ট করে। কারণ, বাংলার বাড়ির প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে গিয়েছিল প্রৌঢ়ার অ্যাকাউন্টে। সেই মতো পাকা বাড়ি তৈরির কাজও শুরু করেছিলেন তিনি। ঘরের একাংশ ভেঙে ভিত তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সুখের দিন আর দেখা হলো না বাঁকুড়ার ইন্দাসের নন্দীপাড়ার বাসিন্দা উজ্জ্বলা হাজরা (৫৫) নামে ওই প্রৌঢ়ার।

    বুধবার গভীর রাতে নাতি দেব কেওড়াকে (১৫) নিয়ে তিনি যখন ঘরের অপর একটি অংশে ঘুমোচ্ছিলেন, তখন তাঁদের উপর আচমকা ভেঙে পড়ে মাটির দেওয়াল। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় দু’জনেরই।

    সারা রাত কেটে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নজরে আসে পড়শিদের। ভাঙা দেওয়াল সরিয়ে দিদিমা ও নাতিকে উদ্ধার করে ইন্দাস ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মৃত প্রৌঢ়ার এক আত্মীয় কার্তিক হাজরা বলেন, ‘পাশের একটি পুকুরের জল সেচ করে বের করা হচ্ছিল। নালা দিয়ে সেই জল এসে কাকিমার বাড়ির কাছে জমা হয়।

    এমনকী সদ্য কাটা ভিতেও জল জমে যায়। সেই জল পেতেই দেওয়াল আলগা হয়ে গিয়ে ধসে পড়ে এই ঘটনা ঘটেছে।’ জানা গিয়েছে, পাত্রসায়রের বেলডাঙা থেকে মেলা উপলক্ষে ইন্দাসের নন্দীপাড়ায় মামাবাড়িতে এসেছিল ওই প্রৌঢ়ার নাতি দেব।

    এ দিন খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় ইন্দাস থানার পুলিশ। এ দিন ভোরেই সেখানে গিয়ে হাজির হন ইন্দাসের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। বিডিও সুরেন্দ্রনাথ পতি বলেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পরিবারটির পাশে আমরা আছি।’ বিডিও জানিয়েছেন, নতুন বাড়ি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় ক্লাব কিংবা আইসিডিএস সেন্টারে থাকার জন্য ওই পরিবারকে অনুরোধ করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি।

    এ দিকে, এই ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে যান তৃণমূলের ইন্দাস ব্লক সভাপতি শেখ হামিদ। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে সার্ভে হওয়ার পরেও ওই মহিলা বাড়ি পাননি। কেন্দ্র যদি সঠিক সময়ে বাড়িগুলি দিয়ে দিত তা হলে আজকে এ ভাবে দেওয়াল চাপা পড়তে হতো না গরিব মানুষগুলোকে। কেন্দ্রের বঞ্চনার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে উজ্জ্বলা হাজরা বাড়ির টাকা পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁকে আমরা হারালাম।’

    এ প্রসঙ্গে বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র দেবপ্রিয় বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘যদি স্বজনপোষণ, দুর্নীতি না করে এই রাজ্যে ঠিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস যোজনার কাজ চলত, যেমন অন্যান্য রাজ্যে চলছে তা হলে ইন্দাসে এই রকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না। এই ঘটনার জন্য এই রাজ্যের সরকারই দায়ী।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘বাড়িটি যদি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় ছিল তা হলে স্থানীয় পঞ্চায়েত কী করছিল? কেন বাড়ির সদস্যদের অন্যত্র সরানো হয়নি?’

  • Link to this news (এই সময়)