• কলকাতা বইমেলায় ইউএসপি জার্মানি, থাকছে না বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব
    এই সময় | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, নয়াদিল্লি: কূটনীতির কাঁটাতারেই কি শেষ পর্যন্ত আটকে গেল সাহিত্য? কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এ বছর থাকছে না বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব। এর নেপথ্যে সে দেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে অত্যাচার এবং তার কারণে দু’দেশের কূটনৈতিক টানাপড়েনই যে দায়ী, তা বইমেলার আয়োজকদের কথায় পরিষ্কার। তবে বাংলাদেশ না–এলেও এ বারের বইমেলার আকর্ষণ–সূচক বেশ উপরের দিকেই থাকবে।

    কারণ এই প্রথম ‘থিম কান্ট্রি’ হিসেবে কলকাতা বইমেলায় আসছে জার্মানি। ১৯৯৬ থেকে প্রতি বছর কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন পেয়েছেন কলকাতার পুস্তকপ্রেমীরা। এপার–ওপার দুই বাংলার সাহিত্যের মেলবন্ধন নিয়ে আলোচনা ছিল কলকাতা বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ।

    কিন্তু বৃহস্পতিবার কলকাতা বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় নয়াদিল্লিতে বলেন, ‘এ বার একটা জিও–পলিটিক্যাল ইস্যু চলছে। এ বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে চাই না। সকলেই জানেন কী ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কলকাতা বইমেলার নিরাপত্তা ও পবিত্রতার কথা মাথায় রাখছি। মেলার অন্য স্টলগুলিকে আমরা বিপদগ্রস্ত করতে চাই না। তাই এ বারের বইমেলায় বাংলাদেশের কোনও স্টল রাখতে পারছি না।’

    তাঁর সংযোজন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ সাহিত্যের কোনও সীমান্ত বা কাঁটাতারের বেড়া হয় না। হুমায়ুন আহমেদ এখানে যেমন জনপ্রিয়, তেমনই ওপারে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমরা জানি না যে, বাংলাদেশের স্টল এখানে এলে কী ঘটবে।’

    বাংলাদেশ হাই কমিশনও এ বার বইমেলায় স্টল দেওয়ার ব্যাপারে কোনও উৎসাহ দেখায়নি। তবে সে দেশের একটি পুস্তক সংস্থা বইমেলায় আসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু গিল্ডের তরফে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিয়ম মেনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে। ত্রিদিব বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের যা পরিস্থিতি তাতে কেন্দ্রের তরফে নির্দেশ না–এলে আমাদের কিছু করার নেই। অন্যবার বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারের তরফে আবেদন জানানো হয়।

    এ বার আধা–সরকারি পর্যায়ের একজন মাত্র একবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আমরা জানিয়ে দিই, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে সঠিক পদ্ধতিতে তাঁদের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।’ যদিও ত্রিদিব এবং গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে–র দাবি, বাংলাদেশ না–থাকলেও বইমেলার আকর্ষণ এ বার বিন্দুমাত্র কমবে না।

    ৪৮ তম বইমেলার ‘ফোকাল থিম কান্ট্রি’ হিসেবে থাকছে জার্মানি। থমাস মান, ফ্রাঞ্জ কাফকার মতো কালজয়ী সাহিত্যিকদের দেশ এই প্রথমবার কলকাতা বইমেলায় আসছে। জার্মানিকে আনার জন্য গিল্ড দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে। তা সফল হওয়ায় খুশি উদ্যোক্তারা। এ দিন নয়াদিল্লির ম্যাক্স মুলার ভবনে ভারতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ একেরম্যান এবং গোটে ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়ার ডিরেক্টর মারুলা স্টুকেনবার্গের উপস্থিতিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন গিল্ডের কর্তারা। জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফার্ট শহরের আইকনিক বইমেলা থেকেই কলকাতা বইমেলা অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। এ হেন জার্মানিরই কলকাতায় আসতে এত সময় লাগল কেন? একেরম্যান বলেন, ‘এর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। স্বীকার করছি, আমরা দেরি করেছি। তবে আমরা শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েই আসছি।’

    ২৮ জানুয়ারি বইমেলার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গিল্ডের তরফে সে দিন দু’লক্ষ টাকা মূল্যের বিশেষ সাহিত্য–সম্মান তুলে দেওয়া হবে প্রবীণ সাহিত্যিক আবুল বাশারের হাতে। মুখ্যমন্ত্রীই এই সম্মান প্রদান করবেন। ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বইমেলা। এই প্রথমবার মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে না কোনও হল। আক্ষরিক ভাবেই এ বার কলকাতা বইমেলা হবে খোলা আকাশের নীচে। ২৯ জানুয়ারি বইমেলায় জার্মানি দিবস, ২ ফেব্রুয়ারি শিশুদিবস এবং ৪ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র সিটিজ়েন দিবস পালন করা হবে। বইমেলার অন্যতম বড় আকর্ষণ ‘কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’ হবে ৬-৮ ফেব্রুয়ারি।

  • Link to this news (এই সময়)