রয়্যাল আতঙ্কের মাঝে পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড়ে চিতাবাঘ! মিলেছে পায়ের ছাপ
প্রতিদিন | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে বন্দি করতে গিয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ে হদিশ মিলল চিতাবাঘের। সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে আসা জিনাতকে বন্দি করার সময়েই রাইকা পাহাড়ে চিতাবাঘের পদচিহ্ন মেলে। প্রথমে বনদপ্তরের সন্দেহ হলেও পরের দিকে তা নিশ্চিত হয়। আর এবার রাইকা পাহাড় সংলগ্ন বারুডি গ্রামের পাশে বুধবার বিকেলের দিকে একটি সারমেয়র খুবলে খাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই সঙ্গে জখম অবস্থাতেও একটি সারমেয় দেখতে পাওয়া যায়।
ওই ঘটনা চিতাবাঘের হামলা বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে বনদপ্তর। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, “রাইকা পাহাড়ে চিতাবাঘ রয়েছে। হয়তো জিনাতের আগে এখানে বাঘও আসত। খেয়েদেয়ে চলে যেত। জিনাত আসার পরেই আবিষ্কার হলো যে এটি অস্থায়ীভাবে বাঘেরও ডেরা।” ওই লেপার্ড বা চিতাবাঘকে যাতে ক্যামেরাবন্দি করা যায় সেই বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগে। বাঘ পর্ব মিটলেই রাইকা পাহাড়ের বড় অংশ জুড়ে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বান্দোয়ান এক বনাঞ্চলের রাইকা পাহাড়ের উচ্চতা ১ হাজার ৫৪৪ ফুট। বছর দেড়েক আগেও কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের অজানা ছিল যে রাইকা পাহাড়ে নেকড়ে রয়েছে। তবে ট্র্যাপ ক্যামেরাতেই তা ধরা দেয়। তবে হায়না যে এ পাহাড়ে রয়েছে সেই বিষয়ে নিশ্চিত ছিল কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে নিয়ে যখন হিমশিম অবস্থা তখন চিতাবাঘের উপস্থিতিতে খানিকটা খুশি কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। হায়না, নেকড়ে, চিতাবাঘ সেইসঙ্গে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের উপস্থিতিতে কংসাবতী দক্ষিণ
বনবিভাগের বান্দোয়ান এক বনাঞ্চলে জঙ্গল যে বাড়ছে তা পরিষ্কার। এই জেলায় কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটে প্রায় তিন বছর ধরে চিতাবাঘ ঘর-সংসার করছে। তারপর রাইকা পাহাড়ে চিতাবাঘের উপস্থিতিতে এই কঠিন সময়েও উল্লসিত বনদপ্তর।
তবে হঠাৎ করে রাইকা পাহাড়ে বিড়াল প্রজাতির একাধিক বন্যপ্রাণের হদিশ মেলায় আতঙ্কিত ওই এলাকার মানুষজন। সব মিলিয়ে আপাতত জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল মানুষজনের রুটিরুজি প্রায় বন্ধ। রাইকা পাহাড়তলির একটি বড় অংশের মানুষজন আর জঙ্গলে যাচ্ছেন না। ফলে বনদপ্তরের খুশির মধ্যেই যেন উদ্বেগ। খানিকটা চাপও তৈরি হয়েছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগে। কোটশিলা বনাঞ্চলের টাটুয়াড়াতে ২০১৫ সালের ২০ জুন একটি চিতাবাঘ লোকালয়ে চলে আসার পর তাকে পিটিয়ে মেরেছিল এলাকার মানুষজন। এছাড়া আটের দশকেও জয়পুরের পুনদাগ এলাকায় চিতাবাঘ লোকালয়ে চলে আসে। তবে কোটশিলার সিমনিতে চিতা বাঘকে ঘিরে মানুষজনের কোন ক্ষোভ তৈরি হয়নি। ওই জঙ্গলে যাতে চিতা ভালোভাবে ঘর-সংসার করতে পারে সেটাই চেয়ে এসেছেন গ্রামের মানুষজন। রাইকা পাহাড়েও যাতে সেই ছবি দেখা যায় সেই চেষ্টাই করছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। আসলে বনদপ্তরের ধারাবাহিক প্রচারে বন্যপ্রাণ নিয়ে মানুষজনের সচেতনতা বেড়েছে। এখন তারই সুফল পাচ্ছে এই জেলার বনবিভাগ।