ফাঁসি নাকি যাবজ্জীবন? আর জি করের ‘খলনায়ক’ সঞ্জয়ের নিয়তি কী? ফিরে দেখা বাংলা কাঁপানো সেই দিনগুলি
প্রতিদিন | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাত পোহালেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন মামলায় রায় দেবে শিয়ালদহ আদালত। ফাঁসি নাকি যাবজ্জীবন, মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নিয়তি ঠিক হবে বিচারকের কলমের একটি আঁচড়ে। কী রায় দেবে আদালত, সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। তার আগে ফিরে দেখা আর জি কর কাণ্ড।
গত বছরের ৮ আগস্ট, নাইট ডিউটি ছিল সোদপুরের বাসিন্দা তরুণী চিকিৎসকের। ওই রাতে শেষবার ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। ৯ আগস্ট সব শেষ। হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয় তাঁকে। তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। ১০ আগস্ট এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে গত ১২ আগস্ট নির্যাতিতার বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। শোকস্তব্ধ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে কলকাতা হাই কোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবিতে মামলা হয়। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ আগস্ট CBI তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
এই ঘটনার সুবিচারের দাবি পথে নামে কলকাতা। গত ১৪ আগস্ট রাতদখল করেন মহিলারা। তাতে ব্যাপক সাড়া মেলে। অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের মানুষজন। ওই রাতেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। গত ১৮ আগস্ট এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়। এদিকে, আবার সিপি বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে সরব হন চিকিৎসকরা। গত ২ এবং ৩ সেপ্টেম্বর জুনিয়র চিকিৎসকরা লালবাজার অভিযান করেন। ১০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকরা অবস্থান আন্দোলন শুরু করেন। ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের ডাক দেন। তবে দুদিনই বৈঠক ভেস্তে যায়।
১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্বাস্থ্যভবনে চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে আচমকা পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দিদি’ হিসাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আন্দোলন প্রত্যাহারের আর্জি জানান। ওইদিন সন্ধেয় ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে ডাকা হয়। ওই বৈঠকও বানচাল হয়ে যায়। এই টানাপোড়েনের মাঝে দফায় দফায় জেরার পর গ্রেপ্তার হন আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল।
এই ঘটনার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর সিপি বিনীত গোয়েলকে সরানো হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান প্রত্যাহার করেন। আর জি কর আন্দোলনের মাঝে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাগর দত্ত হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের উপর হামলা করা হয়। মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু হয়। স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ, নিরাপত্তা-সহ একাধিক দাবিতে গত ৫ অক্টোবর ধর্মতলায় অনশন আন্দোলন শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
গত ৭ অক্টোবর মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম উল্লেখ করে সিবিআই চার্জশিট পেশ করে আদালতে। গত ১৯ অক্টোবর মুখ্যসচিবের মাধ্যমে অনশনকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের ফের বৈঠক হয়। অনশনকারীরা তাঁর লাইভ সম্প্রচার দেখেন। বৈঠকের পর ওইদিনই অনশন প্রত্যাহার করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। গত ৪ নভেম্বর সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ আদালতে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। তার ১ মাস ৭ দিনের মাথায় আগামী ১৮ জানুয়ারি আর জি করের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন মামলায় রায়দান। কী জানায় আদালত, সেদিকে নজর সকলের।