গুড়াপ কাণ্ডে ৫৪ দিনেই ধর্ষককে ফাঁসির সাজা, রাজ্য পুলিশের হাত ধরেই এল সাফল্য...
আজকাল | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: রাজ্য তথা দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত। জুলাই ২০২৪ কার্যকর হওয়া পকসো এবং বিএনএস, এই নতুন আইনে অভিযোগ দায়েরের মাত্র ৫২ দিনের মধ্যে বিচার পর্ব সম্পন্ন করে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ৫৪ দিনের মাথায় সেই মামলায় অভিযুক্তের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছেন চুঁচুড়া পকসো আদালতের বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী।
মামলার সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, এই রায়দান রাজ্য তথা দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত, কারণ প্রথমত আগে গোটা দেশে পকসো মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলতো পকসো এবং আইপিসি অনুসারে। গত ২০২৩ সালে সংসদে নতুন পকসো বিএনএস আইন পাশ হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের ১ জুলাই সেই আইন কার্যকর হয়। সেই আইন অনুযায়ী চালানো বিচার প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে রায়দানের ক্ষেত্রে এই মামলা অন্যতম। হিসেব অনুযায়ী ৫৪ দিনের মাথায় রায়দান হলেও সময় লেগেছে মাত্র ৩৭ দিন। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ১ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত টানা ৮ দিন বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। ২ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী আধিকারিককে জেরা করেন অভিযুক্ত আইনজীবী। তারপরেও বিচার প্রক্রিয়ার মাঝে পড়েছিল ৫ এবং ১২ ডিসেম্বর দু'টি রবিবার। গত ১১ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট পেশ করেন মামলার তদন্তকারী আধিকারিক ধনেখালির সার্কেল ইন্সপেক্টর রামগোপাল পাল। অভিযুক্তের আইনজীবী আদালতের থেকে ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। এখানেও ৭ দিন বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। মামলা চলাকালীন মোট ১৭ দিন বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। অর্থাত দ্রুততম অভিযোগ দায়েরের ৩৫ দিনের মাথায় মামলায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং ৩৭ দিনের মাথায় ফাঁসির নির্দেশ দিল আদালত। নতুন বি এন এস আইনে এটাই প্রথম দ্রুততম মামলা নিষ্পত্তির নজির গড়ল।
শঙ্কর জানিয়েছেন, এই মামলায় সহযোগিতা করেছেন আইনজীবী সুদেষ্ণা সাধু। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের ২৪ নভেম্বর, হুগলির গুড়াপ থানা এলাকায়। পাঁচ বছরের এক শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায় প্রতিবেশী প্রৌঢ় অশোক সিং। মেয়ে মাংস খেতে চেয়েছিল তাই তার বাবা বাজার থেকে মাংস কিনতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন বাবা। বেশ কিছুক্ষণ তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাড়া-প্রতিবেশীরাও ওই শিশু কন্যাকে খুঁজতে শুরু করে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অভিযুক্তের বাড়ি থেকে শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই ধনিয়াখালি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার খবরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্তকে ব্যাপক মারধর করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাতেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্ত অশোক সিং আহত থাকায় তাকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পরের দিন অর্থাত ২৫ নভেম্বর শিশুর মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসানো হয়। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়। দ্রুত এবং ঘটনার সঠিক তদন্ত করার জন্য পাঁচ সদস্যের সিট গঠন করার নির্দেশ দেন হুগলি গ্রামীন পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। সিটের নেতৃত্বে থাকেন ডিএসপি ডিএন্ডটি প্রিয়ব্রত বক্সি। দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয় তদন্ত প্রক্রিয়া। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। সেদিন অভিযুক্তের ফাঁসি দাবি করে ছিলেন তিনি। এদিন অভিযুক্তকে সেই ফাঁসির নির্দেশই দিয়েছেন চুঁচুড়া পকসো আদালতের বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী। একইসঙ্গে দশ লক্ষ টাকা সহায়তা প্রদানের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।
অভিযুক্তের সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় খুশি বাবা। মৃত শিশুর মা জানিয়েছেন, আদালতের বিচারে তিনি খুশি। এদিনই ছিল মেয়ের জন্মদিন। মেয়ে বলেছিল, ৬ বছরের জন্মদিন কেক কেটে পালন করবে। আজই বেরোল ওর খুনের রায়।
দ্রুত সাজা ঘোষণায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর ফেসবুক হ্যান্ডলে লিখেছেন, ''গুড়াপে শিশুকন্যার ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সাজা ঘোষণা করায় বিচারব্যবস্থাকে ধন্যবাদ। ৫৪ দিনে মামলার নিষ্পত্তি করা হুগলি জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ। শিশুটির পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। সমাজে ধর্ষকদের কোনও জায়গা নেই। শিশুদের সুরক্ষিত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে আমাদের। এ হেন ঘৃণ্য অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।''