বাঘাযতীনের বিদ্যাসাগর কলোনিতে চার তলা বাড়ি হেলে যাওয়ার পর হুঁশ ফিরল কলকাতা পুরসভার। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের আর কোথাও এই ধরনের কোনও বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে কি না, তা সরজমিন খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বিল্ডিং বিভাগকে। সেইমতো সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা (এসএই) পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করবেন।
হেলে পড়া বাড়ি মিললে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন পুর–কর্তৃপক্ষ। পুর কমিশনার দাভাল জৈন এই সময়’কে বলেন, ‘শহরের আর কোথাও হেলে পড়া বাড়ি আছে কি না, সে দেখতে বলা হয়েছে। নাগরিকদের কেউ যদি এমন বাড়ি দেখেন, তাঁরাও জানাতে পারেন।’
পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে কোনও হেলে পড়া বাড়ি সোজা করতে গেলে পুরসভার অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন, হেলে পড়া কী ভাবে সোজা করতে হবে, সে ব্যাপারে পুর–ইঞ্জিনিয়ারদের কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে? কোনও বাড়ি হেলে গেলে তা সোজা করতে মূলত হাইড্রলিক জ্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তির বিন্দুবিসর্গ তাঁরা জানেন না। প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার নীলাংশু বসু বলেন, ‘জ্যাকিং প্রযুক্তিটা এখনও পরীক্ষা–নিরীক্ষার স্তরে রয়েছে। পুরসভার হাতে এমন কোনও এক্সপার্ট নেই যাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’ বিল্ডিং বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার যুক্তি, ‘আমরা অজ্ঞ হতে পারি। কিন্তু বিষয়টা নজরে এলে আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা খড়্গপুর আইআইটি’য–র মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারি। তাতে দুর্ঘটনাট এড়ানো যাবে।’
বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা জানাচ্ছেন, বাঘাযতীনে হেলে পড়া বাড়ি সোজা করতে গিয়ে বিপর্যয় ঘটলেও মাটি বসে গিয়ে বাড়ি হেলে যাওয়ার ঘটনা শহরে নতুন নয়। কলকাতার একাধিক জায়গায় এই ধরনের বাড়ি রয়েছে। সেগুলি বছরের পর বছর হেলা অবস্থাতেই রয়েছে। সেখানে লোকজনও বসবাস করছে।
শেক্সপিয়র সরণি ও জওহরলাল নেহরু রোডের ক্রসিংয়ে একটি ১৬ তলা বহুতল একদিকে কিছুটা হেলে রয়েছে। মোমিনপুরেও এমন একটি বহুতল প্রথম থেকেই হেলে। একই ভাবে গুরুসদয় রোড ও বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড ক্রসিংয়ে একটি বাড়ি কিছুটা হেলে রয়েছে। সেখানে আবাসিকদের পাশাপাশি দোকানপত্রও রয়েছে। জেমস লং সরণিতেও একাধিক বাড়ি হেলে রয়েছে। সেখানে এক সময়ে পুকুর ছিল। সেই পুকুর ভরাট করে বাড়ি তৈরি হয়। তপসিয়া এলাকাতেও একাধিক বাড়ি হেলে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা।
কলকাতা পুরসভার টাউন প্ল্যানিং বিভাগের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘কলকাতার ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে নদী এবং সমুদ্রের পলি জমে। সে জন্য এখানকার মাটি নরম। মুম্বই বা দিল্লির মতো শক্ত পাথুরে মাটি নয়। কলকাতার সংযোজিত এলাকাগুলিতে কয়েক ফুট গর্ত খুঁড়লেই জল বেরোতে থাকে। বাড়ির চারপাশে পাইলিংয়ের কাজ ঠিকমতো না হলেই গোড়ার মাটি সরে গিয়ে পিলার বসতে শুরু করে। বাঘাযতীনেও সম্ভবত এমন ঘটেছে।’