এই সময়: কোথাও ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে, কোথাও দরজার পাল্লা ভেঙে ঝুলছে। ড্যাম্পে স্যাঁতসেঁতে স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষে ক্লাস করতে গিয়ে খুদে পড়ুয়ারা কাহিল।পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক প্রাথমিক স্কুলেই এ দৃশ্য অতি পরিচিত। এর মধ্যে আবার কলকাতা–সহ বিভিন্ন জায়গায় বহু স্কুল এখনও ভাড়া বাড়িতে চলে। ভাড়া নিয়েও বাড়ির মালিকের সঙ্গে প্রশাসনের টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। কিন্তু কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের টানাপড়েনের জেরে স্কুলগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতি থমকে। যার জেরে বিপন্ন খুদে পড়ুয়াদের জীবন!
গত বছরের শেষের দিকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণে ২৫ শতাংশ কম্পোজ়িট গ্রান্ট বরাদ্দের কথা জানায় বিকাশ ভবন। স্কুলগুলির দৈনন্দিন খরচ চালাতে কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ, রাজ্য সরকার দেয় ৪০ শতাংশ।
পড়ুয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে দেওয়া হয় এই টাকা। কিন্তু প্রাথমিকের ক্ষেত্রে গত বছরের শেষের ওই বিজ্ঞপ্তি প্রযোজ্য নয়। আবার, সমগ্র শিক্ষা মিশনে (এসএসএম) কেন্দ্রীয় বরাদ্দও বন্ধ। রাজ্যে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁইছুঁই। দুই সরকারের চাপানউতোরে বেশিরভাগেরই অবস্থা সঙ্গীন। রাজ্য স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বিষয়টা তাঁরা বিবেচনা করছেন। শীঘ্রই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হতে পারে।
কেন্দ্র চাইছে, দেশের অন্যান্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো পশ্চিমবঙ্গও ‘পিএমশ্রী’ প্রকল্পের মউ সই করুক। কিন্তু রাজ্য এতে রাজি নয়। ২০২২–এর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গোটা দেশেই স্কুলের উন্নয়নে ‘পিএমশ্রী’ খাতে পাঁচ বছরের জন্য ২৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এতে সই করেনি। কাজেই প্রকল্পের টাকাও মিলছে না। এই অবস্থায় প্রাথমিক স্কুলগুলির উন্নয়নে ভরসা বলতে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক–শিক্ষিকারা।
বহু প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, মেরামতির জন্য ২০২৩–এর অগস্ট থেকে কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা মেলেনি। হিমশিম অবস্থা তাঁদের। ইলেকট্রিক বিল, টয়লেট ও ক্লাসরুম সাফাইয়ের জন্য খরচের বড় অংশই প্রধান শিক্ষকদের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে বলে এঁদের অনেকের অভিযোগ। নতুন বছরে অ্যাটেন্ডেন্স রেজিস্টারও কিনতে হচ্ছে নিজেদের! কলকাতার ৪০০ স্কুলই চলে ভাড়া বাড়িতে। সেই স্কুলগুলির ভাড়াও দিতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষকদেরই।
কাঁকুরগাছির জ্ঞানদীপ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শৈলেশ শর্মা বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই সিলিংয়ের চাঙড় খসে পড়ে। অভিভাবকদের অভিযোগের শেষ নেই। নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকেই আর স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না ছেলেমেয়েদের।’
শিক্ষক নেতা ভীমসেন বিশওয়াল বলেন, ‘কেন্দ্র–রাজ্যের তরজায় প্রাথমিক স্কুলগুলির অবস্থা সঙ্গীন। ভুগছে খুদে পড়ুয়ারা।’ ট্যাংরার শাস্ত্রীজি হরিজন বিদ্যামন্দিরের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, ‘শুক্রবারই স্কুলের ছাদের সানশেডের একাংশ ভেঙে পড়ে আমার গায়ে! এটা ছোটদের উপরে পড়লে কী হতো!’