সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়
শহর থেকে গ্রাম — রাজ্য জুড়েই ঘটে চলেছে একের পর এক পথদুর্ঘটনা। এর মোকাবিলায় রাজ্য সরকার খড়্গপুর আইআইটি–র বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগী হলো। নয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহর বা গ্রামের স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় গাড়ির গতি কোনও ভাবেই ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটারের বেশি হবে না। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখতে হবে। সম্প্রতি এই মর্মে নির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে পরিবহণ দপ্তর।
খড়্গপুর আইআইটি পরিবহণ দপ্তরকে দেওয়া রিপোর্টে জানিয়েছে, শুধুমাত্র ডানকুনি থেকে খড়্গপুরের মধ্যেই জাতীয় সড়কের ধারে ৮০টি স্কুল রয়েছে। এই সব স্কুলের পড়ুয়ারা কী ভাবে যাতায়াত করবে, তা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাজ্য সড়কগুলিতেও উঠে পড়ছে সাইকেল, অটো রিকশা, টোটো বা ছোট গাড়ি। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঘটছে মৃত্যুও। এই সব এলাকায় দুর্ঘটনা কমাতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া পথ নেই।
আইআইটি–র বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতেই কোন যানবাহনের চাপ কেমন, তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট মাপকাঠি তৈরি করেছে স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিল। তার ভিত্তিতেই পরিবহণ দপ্তর রাজ্যের বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা তৈরি করেছে। তাতে জানানো রয়েছে, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে পথে রিকশা, টোটো, অটো রিকশা চলাচল করে, সেখানে গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি রাখা যাূবে না।
যে সব জায়গায় স্কুল–কলেজ, বাজার, হাসপাতাল কিংবা বড় আবাসন রয়েছে, সেখানে গাড়ির গতি ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি হওয়া চলবে না। তবে ভিআইপি রোড, বাইপাসে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার রাখা যাবে। যদি রাস্তা দুই বা তিন লেনের হয় এবং মোটরবাইক, অটোরিকশা, মিনি ট্রাক ও টোটোর মতো কম গতির গাড়ির চলাচল মোট যানবাহনের ১০ শতাংশের কম হয়, সেখানে গতিবেগ রাখতে হবে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে। তিন লেনের রাস্তা, সার্ভিস রোড রয়েছে — এমন রাস্তায় গতি প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হবে।
নির্দেশিকা জারি হলেও তা কতটা মানা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পথ নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্য সরকার সব সময়েই গুরুত্ব দিয়ে দেখে। এই নয়া নীতি কার্যকরে পুলিশকে তৎপর হতে হবে। না হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।
রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের উপদেষ্টা ও আইআইটির অধ্যাপক ভার্গব মৈত্রের কথায়, ‘পথ নিরাপত্তার স্বার্থে এই মুহূর্তে যানবাহনের গতির নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া বিকল্প পথ কিছু নেই। রাজ্যে যত পথ দুর্ঘটনা ঘটে, তার ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ পথচারী, সাইকেল আরোহী বা মোটরবাইক আরোহী জখম হন অথবা প্রাণহানি ঘটে। যান নিয়ন্ত্রণ না করে এই অবস্থা ঠেকানো যাবে না।’