২০২৪ সালের ৯ আগস্ট, হঠাৎই শিরোনামে উঠে আসে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ। অভিযোগ ওঠে, তাঁকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়। স্টেথো হাতে যে তরুণী স্বপ্ন দেখেছিলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর, তাঁর এই পরিণতি মানতে পারেননি বাংলা তথা দেশবাসী। আন্দোলনে উত্তাল হয় রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ও দোষীর ফাঁসির সাজা দাবি করেন। সেই ঘটনার ৫ মাস (১৬২ দিন) পর আজ ১৮ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালতে রায় ঘোষণা হতে পারে এই মামলার। বিচারক অনির্বাণ দাস কী রায় দেবেন? সেই দিকে সব নজর।
যে ঘটনায় কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা জেলায় রাতদখল করেন আপামর মানুষ। যে ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন সমাজের সমস্ত স্তরের লোকজন। রইল সেই নৃশংস আরজি করের ঘটনার টাইম লাইন।
২০২৪ সালের ৯ আগস্ট: আরজি করে এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল সেমিনার হলের চার তলায়। অভিযোগ ওঠে, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। ঘটনার তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ।
১০ আগস্ট: কলকাতা পুলিশ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই সময় কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে হেফাজতে নেয়। রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন চিকিৎসকরা।
১২ আগস্ট: এই মামলার কিনারা করতে কলকাতা পুলিশকে ৭ দিনের ‘ডেডলাইন’ দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, যদি কলকাতা পুলিশ তা না করতে পারে, তিনি মামলা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেবেন। সেই দিনই ইস্তফা দিতে চান আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। যদিও সেই সময়ে তা গ্রহণ হয়নি। বরং তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
১৩ আগস্ট: সন্দীপ ঘোষকে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দেয় আদালত। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআই-এর হাতে। অভিযুক্তকে হেফাজতে নেয় সিবিআই।
১৪ আগস্ট: ২৫ সদস্য়ের সিবিআই টিম তৈরি হয় তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত করতে। ওই দিনই ‘রাত দখল’-এর ডাক দিয়েছিলেন প্রতিবাদীরা।
১৫ আগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুর। দেশজুড়ে ১৭ আগস্ট কর্মবিরতির ডাক আইএমএ-র।
১৬ আগস্ট: পুলিশ আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
১৯ আগস্ট: সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করে।
২০ আগস্ট: সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ১০ সদস্যের একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন। টাস্ক ফোর্স দেশজুড়ে চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপের প্রস্তাব দেবেন বলে জানানো হয়। কলকাতা পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে এই মামলার স্টেটাস রিপোর্ট চায় সুপ্রিম কোর্ট।
২১ আগস্ট: আরজি কর হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব বর্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে।
২ সেপ্টেম্বর: আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তার হন সন্দীপ ঘোষ।
১৪ সেপ্টেম্বর: সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে আরজি করে চিকিৎসকের খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়। এফআইআর করতে দেরি এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে।
৩ অক্টোবর: ‘জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট’-এর কয়েকজন ডাক্তার চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে অনশনের ডাক দেন।
৭ অক্টোবর: সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই।
২১ অক্টোবর: অনশনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৭ দিন পর অনশন প্রত্যাহার করেন চিকিৎসকরা।
১১ নভেম্বর: শিয়ালদহ কোর্টে শুরু হয় ধর্ষণ ও খুনের বিচার।
১২ নভেম্বর: চার্জশিট জমা দিতে দেরি হওয়ার কারণে চিকিৎসক মৃত্যুর মামলায় অভিজিৎ মণ্ডল এবং সন্দীপ ঘোষের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। তবে দুর্নীতি মামলায় জামিন পাননি সন্দীপ ঘোষ। ফলে তিনি এখনও জেলেই রয়েছেন। ১২ নভেম্বর আরজি কর মামলার ইন ক্যামেরা ট্রায়াল শুরু হয়।
১৮ জানুয়ারি: আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলার রায়দান