• আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জলবায়ুর পরিবর্তন জানাবে AI!
    এই সময় | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • বিকেলের দিকে আকাশে উঁকি দিয়েছিল এক চিলতে একটা কালো মেঘ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা প্রকাণ্ড আকার নিয়ে দখল করল গোটা আকাশ। সঙ্গে চাপা গর্জন ও বিদ্যুতের ঝলক। আসন্ন কালবৈশাখীর জন্য ততক্ষণে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন সবাই। মৌসম ভবনের অ্যাপেও ‘নাউকাস্ট’ জানিয়েছিল, কোন কোন এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ–সহ ঝড়বৃষ্টি আসন্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিচ্ছু হলো না।

    কালবৈশাখীর আবহ পুরোপুরি তৈরি থাকার পরেও বৃষ্টির দেখা নেই! সাধারণ মানুষের অনুমান তো ব্যর্থ হয়েছেই, বোকা ব‍নেছে মৌসম ভবনের আধুনিক প্রযুক্তিও। কিন্তু, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে এই দোলাচলে সম্ভবত ইতি পড়তে চলেছে। বছর কয়েকের মধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার দায়িত্ব পেতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)।

    গুগলের ডিপ মাইন্ড এআই রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে গত ক’বছর ধরে কাজ করছেন একদল বিজ্ঞানী। সেই কাজের উদ্দেশ্য ও অগ্রগতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’–এ। সেখানে উঠে এসেছে নতুন একটি শব্দ — জেনকাস্ট। কম্পিউটর সায়েন্টিস্টদের হাতে তৈরি নতুন এই প্রযুক্তিই হয়তো আজকের আবহবিজ্ঞানীদের কাজ অনেকখানি সহজ করে দেবে। আগামী দিনে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে পরের ১৫ দিনের প্রতিটা ঘণ্টা — এমনকী মিনিটের হিসেবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ভুল ভাবে জানিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি।

    বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, ১৯৭৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছরের আবহাওয়া সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য কম্পিউটরকে ‘ফিড’ করানো। কোনও নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট তারিখে, নির্দিষ্ট সময়ের তাপমাত্রা, বাতাসের চাপ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা, বাতাসের গতি ও অভিমুখ এবং আবহাওয়া–সংক্রান্ত আরও সব তথ্য সংগ্রহ করে ভরে দেওয়া হয়েছে যন্ত্রের ‘মগজে’।

    এর প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোন সময়ে কেমন আবহাওয়া ছিল, তা জেনেছে যন্ত্র। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জেনকাস্ট প্রযুক্তি গোটা পৃথিবীকে ০.২৫ ডিগ্রির মতো সূক্ষ্ম ভাগে ভাগ করেছে। এর পর প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশের মাটি থেকে বিভিন্ন উচ্চতার ১৩টি জায়গার আবহাওয়ার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে সেটাও ‘ফিড’ করানো হয়েছে যন্ত্রকে।

    এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে যদি মেশিনকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার কাজে লাগানো হয়, তা হলে সেই ফোরকাস্ট অনেক নিখুঁত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এআই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণে ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং সেখান থেকে পাওয়া নানা ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা যায়।

    তা হলে কি এতদিন ধরে বিভিন্ন ওয়েদার স্টেশনে কাজ করা আবহবিদরা যন্ত্রের কারণে ব্যাকফুটে চলে যাবেন? এমন সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এআই–এর কাজ হবে শুধুই তথ্য বিশ্লেষণ এবং পূর্বাভাস দিয়ে বিজ্ঞানীদের কাজে সুবিধা করে দেওয়া। নতুন প্রযুক্তি তৈরির কাজটা বিশেষজ্ঞদেরই করতে হবে।

  • Link to this news (এই সময়)